প্রাথমিক শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতার অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান

শ্রান্তি বিনোদন ভাতা নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের শিক্ষকদের ভোগান্তির শেষ নেই! প্রতি তিন পূর্ন হওয়া ও ছুটি মঞ্জুর সাপেক্ষে এই ভাতা প্রদানের নিয়ম থাকলে ও ঠিক সময়ে ১৫ দিন অথবা তার বেশি ছুটি না হওয়ায় অনেক কর্মচারী ও শিক্ষক শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কোন বছর হয় ভ্যাকেশন (পনের দিনের বেশি ছুটি) হয় এগিয়ে আসে অথবা পিছিয়ে যায়। যেহেতু প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহের শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি প্রতি রমজান মাসে সমন্বয় করা হয়। সেহেতু ঠিক সময়ে ছুটি মঞ্জুর না হওয়ায় শ্রান্তি বিনোদনের জন্য শিক্ষকদের পরের বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিস সমুহকে একাউন্স অফিসের বরাদ্দের উপর নির্ভর করতে হয়। এ অজুহাতে অনেক শিক্ষক ঠিক সময়ে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ঠিক সময়ে পান না৷

শ্রান্তি বিনোদন ভাতা যে কোন পনের দিনের কম ছুটিতে দেওয়া যায় না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চাকুরী বিধিতে অর্থ মন্ত্রালয়ের প্রবিধি শাখার একটি আদেশ বা প্রজ্ঞাপন আছে। যেটি ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয়।

এর ফলে পরবর্তীতে ছুটি জনিত জটিলতায় শিক্ষক ও কর্মচারী বৃন্দ এ ভাতা পেতে যখন ভোগান্তির শিকার হচ্ছিলেন তার অনেক বছর পরে ২০০৫ সনের ০৭ মে তারিখে অর্থ মন্ত্রালয়ের সাথে পরামর্শ পূর্বক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। যাতে বলা হয় যে কোন উপলক্ষে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন ছুটি থাকলে ঐ ছুটিতে শিক্ষকদের বিধি মোতাবেক শ্রান্তি বিনোদনের ছুটি ও ভাতা প্রদান করা যাবে। আমাদের জেনে রাখা ভালো শ্রান্তি বিনোদনের বিধি প্রনয়ন ও ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা একমাত্র অর্থ মন্ত্রালয় রাখে। যা ১৯৭৯ এর উপরোল্লিখিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ আছে।

এ ক্ষেত্রে বর্তমান করোনা কালের জন্য বিগত ১৬ মার্চ ২০২০ ইং তারিখ হতে হতে প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যা আগামী ০৬ আগষ্ট তারিখ পর্যন্ত চলবে। এ সময়ে অনেক শিক্ষক-কর্মচারীদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তির সময় চলে এসেছে। কিন্তু শিক্ষা অফিস সমুহে সু স্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তারা এই ভাতা দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এ সংক্রান্ত আরেকটি জটিলতা ছিল তা হল অনেক হিসাব রক্ষণ অফিসে অতিরিক্ত বরাদ্দ না থাকা।

READ MORE  নব্য জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের টাইমস্কেল, চাকুরীকাল গণনার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রনালয়ের 'না' : নির্দেশনা জারি

অবশেষে প্রতি বছরের এই ভোগান্তির বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সকল শিক্ষিকা – শিক্ষকবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হন। এ বিষয়ে শিক্ষক নেতা মোহাম্মাদ শামছুদ্দিন মাসুদ সহ অনেকেই অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে শিক্ষকদের প্রতি বছরের এই ভোগান্তির বিষয়ে কথা বলেন।

অতপর, বিগত ১৩ জুন তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবার সারা বাংলা নামক একটি ফেসবুক গ্রুপের একটি জুম লাইভে মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ ঘোষণা দেন যে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ প্রতি তিন বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাবেন।

এছাড়া বিগত ০৯ জুন ২০২০ তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর এক প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা অফিস সমুহের কাছে এ বছর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাবে এমন শিক্ষকদের তথ্য চাওয়া হয়। পরবর্তী তথ্য শিক্ষা অফিস সমুহ তথ্য প্রদান করায় অতিরিক্ত এই বাজেট বরাদ্দ প্রদানের জন্য এই আদেশ জারি করে। যাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদনের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে। এই বরাদ্দের পরিমান ১২ কোটি ৭৫ লক্ষ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা।
তবে শিক্ষকবৃন্দ নীতি মালা ও ছুটির বিধান যাই থাক, প্রতি তিন বছর পূর্ণ হলেই শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চায় বলে জানা গেছে!

(এ সংক্রান্ত ১৪ পৃষ্টার প্রজ্ঞাপনটি ‘দৈনিক বিদ্যালয়’/DainikBidyaloy ফেসবুক পেইজে আপলোড করা হয়েছে, যাতে কোন উপজেলা কত টাকা বরাদ্দ পেল তার বিস্তারিত দেওয়া আছে।)

Leave a Comment