পবিত্র কাবা শরীফে হজ্জ বন্ধ থাকার ইতিহাস

ধর্ম

দৈনিক বিদ্যালয় ডেস্কঃ
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ এ ধ্বনিতে এবার সৌদিতে হজ্জ অনুষ্ঠিত হলেও সুযোগ পাবে না সৌদি আরবের বাহিরে থাকা মুসলিম হজ্জ করতে ইচ্ছু প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। এটা ২০২০ সন। এবাব আংশিক ভাবে হজ্জ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে সৌদি প্রেস এজেন্সি ও মধ্য প্রাচ্য ভিত্তিক গনমাধ্যম আল জাজিরা টেলিভিশন। সৌদি সরকার এবার মহামারিতে স্বাস্থ্য ঝুকির কথা বিবেচনা করে বহিরাগত হজ্জ করতে ইচ্ছুকদের সুযোগ বন্ধ করেছে। সৌদি আরবের বাহিরে অবস্থান করা কোন মুসলিম এবার হজ্জে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।

এই করোনা মহামারিতে সৌদিতে বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ছুঁই-ছুঁই। মৃত্যু হয়েছে প্রায় দেড় হাজার মানুষের। সৌদিতে বর্তমানে বিদেশি মানুষ বসবাস করে আমেরিকা ও রাশিয়ার পরে সব চেয়ে বেশি ১০.৪ মিলিয়ন মানুষ। বাংলাশিরাই আছে শুধু ২ মিলিয়ন।

হজ্জ ইসলাম ধধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে আর্থিক বিবেচনায় ২ টি প্রধান ফরজের একটি। আরেকটি হল যাকাত প্রদান যা অর্থ বিষয়ক ফরজ কাজ। হজ্জব্রত পালনের গুরুত্ব মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে অপরিসীম। আল্লাহর ঘর ও মুসলমানদের বর্তমান কিবলা হওয়ায় এ ঘরটি একবার স্বচক্ষে দেখার বাসনা থাকে প্রতিটি মুমিনগণের অন্তরে।

সৌদি সরকার এ বছরের মার্চ মাসের শুরুর দিকে পবিত্র মক্কা ও মদিনার সব মসজিদে সালাত আদায় থেকে বিরত থাকতে বলে এবং বাড়িতেই সালাত আদায়ের আহবান জানায়। অবশ্যই মহামারি ও দুর্যোগের সময় বাড়িতে অবস্থান করে সালাত আদায় করা মহানবী স. থেকেই স্বীকৃত।

হ্যা, হজ্জ যে শুধু মাত্র এ বছরের জন্য বহিরাগত হজ্জ করতে ইচ্ছু মুসলিমদের জন্য বন্ধ আছে এমনটি নয়; হজ পালন এর আগেও বিভিন্ন কারণে অনেকবার বন্ধ ছিল। নিম্নে এ বিষয়ে হজ্জ বন্ধ থাকার কারণ ও সময়কাল স্বল্প পরিসরে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ!

# ৮৬৫ খ্রিস্টাব্দঃ
তখন ছিল আব্বাসীয় খলিফাদের সময়। ইসমাইল বিন ইউসুফ কর্তৃক মক্কা আক্রমনের কারনে, সে বছর হজ্জ পালন থেকে বিরত থাকে বিশ্ববাসী। তখন আব্বাসীয় খলিফা ছিলেন আল মুসতানজিদ।

READ MORE  এবারের ফিতরা সর্বোচ্চ ২৩১০, সর্বনিম্ন ৭০ টাকা

# ৯৩০ খ্রিস্টাব্দঃ
শিয়া কট্টর পন্থী কারমতি দল, পবিত্র হজ্জ চলাকালীন সময়ে মক্কায় আক্রমণ করে এবং ৩০ হাজার হাজিকে হত্যা করে জমজম কুপে নিক্ষেপ করে। আবু তাহের কারামিয়া ছিল এই আক্রমণকারী দলের প্রধান। এ ছাড়া হাজরে আসওয়াদ পাথর তুলে নিয়ে বাহরাইনে স্থাপন করে। এ কারনেই সে সময়ের পরে থেকে প্রায় একদশক সময় হজ্জ ব্রত পালন বন্ধ ছিল পবিত্র এ ভুমিতে। এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, তা হল রাজনৈতিক অনৈক্য এ হামলার মুল কারণ ছিল।

# ৯৬৮ খ্রিস্টাব্দঃ
এ সময় পবিত্র মক্কা নগরীতে মহামারি দেখা যায়। কয়েক হাজার মানুষ মারা যায়। হাজিদের উটগুলো পানিশূন্যতায় মারা যায়। সেবার ও পবিত্র এ ভুমিতে হজ্জব্রত পালন বন্ধ ছিল।

# ৯৮৩-৯৯০ খ্রিস্টাব্দঃ
আব্বাসীয় খেলাফত ও ফাতেমীয় খেলাফতের মধ্যকার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারনে টানা আট বছর সময়কাল হজ্জ ব্রত পালন বন্ধ ছিল।

# ১০০০-১০২৯ খ্রিস্টাব্দঃ
এই ২৯ বছর সময়কালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও হজ্জের ব্যয় বহনে অক্ষমতার কারনে সৌদি আরবের বাহিরের কোন দেশ বিশেষ করে মধ্য এশিয়া, ইরাক, উত্তর আরবের রাস্ট্র সমুহ ও মিশরের কেহ হজ্জ পালনে যায় নি।

# ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দঃ
এ সময় প্রথম ক্রুসেডের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। এই যুদ্ধের সময় কেউ ভয়ে হজ্জ ব্রত পালন করেন নি।

# ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দঃ
এ সময়ে হালাকু খান কতৃক বাগদাদ অবরুদ্ধ হয়। হালাকু প্রায় ২০ লাখ মানুষ হত্যা করে এই অবরোধে। এ সময়ে প্রান ভয়ে কেহ হজ্জ কর‍তে আসে নি।

# ১৬২৯ খ্রিস্টাব্দঃ
সেবার প্রচন্ড বৃষ্টি হয় মক্কা নগরীতে। এমনকি পবিত্র হারাম শরীফ মক্কার দেওয়াল ভেঙ্গে পড়ে। সে বার ও কেহ হজ্জ ব্রত পালন করেনি পবিত্র মক্কা শরীফে। এরপর তখনকার উসমানী খলিফা ৪র্থ মুরাদ গ্রানাইট পাথর দিয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ পূণরায় নির্মাণ করেন। সেই আসল গঠনটি এখনো রয়েছে।

READ MORE  মসজিদে দুরত্ব মেনে যে কয়জন নামাজ আদায় করতে পারবেন

# ১৮১৪ খ্রিষ্টাব্দঃ
সৌদি আরবের পশ্চিমাংশ বর্তমান হেজাজ প্রদেশে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। যাতে ৮ হাজার মানুষ সেই মহামারিতে মারা যায়। সেবার ও বন্ধ ছিল হজ্জের কার্যক্রম।

# ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দঃ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত অঞ্চল থেকে যাওয়া হাজীগনের মাধ্যমে মক্কায় প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে হজ্জের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
সে হজ মৌসুমে হজেচ্ছু তিনভাগ অবস্থানকারী মারা যায়।

# ১৮৩৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দঃ
এ সময়ের মধ্যে তিন বার প্লেগ ও কলেরা রোগের প্রাদুর্ভাবের কারনে মোট সাত বছর পবিত্র এই ফরজ কাজ পালনের সুযোগ পান নি বিশ্বের মুমিন মুসলমানগন।

# ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দঃ
তবে স্পানিজ ফ্লুর কারনে মক্কা ও মদিনা শহর রুদ্ধ করা হয় তবে এ সময়েও হজ্জ বন্ধ ছিল না। যাতে প্রায় ৫-৬ কোটি মানুষ মারা যায়। অন্য আরো উৎস থেকে জানা যায় প্রায় ১০ কোটি মানুষ মারা যায়।

#১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দঃ
ওতাইবি নামক এক ব্যক্তির অনুসারীগন কাবার প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা করলে তাতে প্রচুর প্রান হানী ঘটে ও ২ সপ্তাহ কা’বায় তাওয়াফ বন্ধ ছিল।

# ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দঃ
একদল ইরানী হাজী আমেরিকা ইজরায়েল বিরোধী বিক্ষোভের কারনে প্রানঘাতি ও হজ্জের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছিল।

# ১৮১৪- ৯২ খ্রিস্টাব্দঃ
এর মধ্যে তেরো বার হজ্জ বন্ধ ছিল এমনটা ও জানা জায়।

যাই হোক, হজ্জ শুধুমাত্র ২০২০ খ্রিস্টাব্দে বহিরাগতদের জন্য সুযোগ থাকছে না এমনটা এবারেই প্রথম নয়। ইতিহাস যুগ যুগান্তর ধরে বয়ে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে সংরক্ষণের অভাবে সামান্য বিকৃতি ও ঘটে। মতান্তর দেখা ও যায়। তবে উপরে স্বীকৃত ইতিহাস সমুহ তুলে ধরার প্রচেষ্টা ছিল প্রাণপণ।

অবশেষে মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাই, ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে যেন দ্রুতই মুখরিত হয় তার প্রিয় নবী-রাসুলদের ইবাদাতগার পবিত্র কাবা। বিশ্ব মুসলিমদের কিবলা। বিশ্ব থেকে দ্রুতই যেন বিতাড়িত হয় করোনা নামক অতিমারি ভাইরাস। আমিন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *