পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, গেজেট, অফিস আদেশ, আইন, বিধি, অধ্যাদেশ কী?

দৈনিকবিদ্যালয় ডেস্কঃ আমরা অনেকেই যে বিষয়টি আসলে পার্থক্য আছে কিনা এতদিন আসলে ভেবেই দেখি নি। সব বিষয়াবলী আসলে প্রায় এক মনে করে আসছি। যেমন প্রজ্ঞাপন আর পরিপত্র এ বিষয়টি প্রায় এক মনে হয়। চলুন আজ এ বিষয়ে একটু প্রাথমিক ধারনা নেওয়া যাক!

#পরিপত্র কী:
রাষ্ট্রের বা দেশের কোনো জন গুরুত্বপূর্ণ বা বিরোধপূর্ণ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা জনগণকে অফিশিয়ালি জানানোর ঘোষণাপত্র হলো পরিপত্র বা Circular। পরিপত্র বা সার্কুলার এর কোনও আইনগত ভিত্তি নেই। সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলে নতুন সার্কুলার দেওয়া যায়। প্রকাশিত পরিপত্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তখন পরিপত্রটি আবার পরিবর্তন করে নতুন পরিপত্র দেওয়া যায়।

#প্রজ্ঞাপন কীঃ
রাষ্ট্রের কোনো জনগুরুত্বপূর্ণ বা বিরোধপূর্ণ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেটি কার্যকর করার প্রমাণপত্র বা দলিল হল প্রজ্ঞাপন। এটি শক্তিশালী আইন গত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। তবে প্রজ্ঞাপন হয়ে গেলে পরবর্তীতে তার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যায় না। আর একবার প্রজ্ঞাপন হয়ে গেলে পরবর্তীতে যা করার আদালত করবে। সেখানে সরকারও কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

#অফিস আদেশ কীঃ
অফিস আদেশ হল, নিয়োগকারী বা কর্তৃপক্ষ বা উর্ধতন কর্মকর্তাদের দ্বারা জারি করা আদেশ। অফিস আদেশ এর মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের স্থান পরিবর্তন যথা বদলী, পদোন্নতি, কর্মঘন্টা নির্ধারণ ইত্যাদি হয়ে থাকে।

#গেজেট কীঃ
গেজেট হল, সরকারী ঘোষণা সম্বলিত এক ধরণের সংবাদ। রাষ্ট্রপতি যখন কোন অফিসিয়াল দলিল স্বাক্ষর করেন তখন সেই দলিল টিকে বলা হয় প্রজ্ঞাপন বা Notification। বিভিন্ন সরকারি অফিস তাদের প্রজ্ঞাপন, আইন, বিধি, প্রবিধি ইত্যাদি গেজেট হিসাবে অন্তুর্ভূক্তি করার জন্য ঢাকার তেজগাঁওয়ে ‘বাংলাদেশ ফরম ও প্রকাশনা’ অফিসে পাঠায়। উক্ত অফিস বিভিন্ন সরকারি অফিসের পাঠানো প্রজ্ঞাপন, আইন, বিধি, প্রবিধি ইত্যাদি বিজি প্রেস বা বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় থেকে গেজেট আকারে ছাপানোর ব্যবস্থা করে থাকে। ছাপানো গেজেটে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কোন স্বহস্তের স্বাক্ষর থাকে না। শুধু মাত্র শেষে লেখা থাকে এমন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে …….।

READ MORE  বয়সসীমা কত হচ্ছে পলিটেকনিকে ভর্তিতে? কমছে ভর্তি ফি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা

#আইন কিঃ
আইন হলো দীর্ঘ দিন ধরে প্রচলিত এমন কিছু প্রথা, রীতি-নীতি ও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রনীত এমন কিছু নিয়ম-কানুন যা একটি রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীর উপর বাধ্যতা মূলক বা অবশ্য পালণীয়।

#আইন ও বিধির পার্থক্যঃ
‘বিধি’ এবং ‘আইনে’ র মধ্যে আসলে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। তবে আইন শব্দটি ব্যাপক অর্থে এবং বিধি শব্দটি কিছুটা নির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন, আইনত শব্দটি বৈধ, অবৈধ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিধিসম্মত কথাটি শুধুমাত্র বৈধ বিষয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাছাড়া আইনের সবগুলো বিষয়কে একত্রে আইন বলা যায়। কিন্তু ‘বিধি’ বলা হয় আইনের প্রতিটি ধারা ও উপধারাকে।

#অধ্যাদেশ কীঃ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজেই যে আইন জারি করে থাকেন তাকে অধ্যাদেশ বা Ordinance বলে। এটি বিশেষ করে যখন সংসদ অকার্যকর থাকে যেমন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কালীন সময়ে অথবা সংসদের অধিবেশন যখন বন্ধ থাকে তখন রাষ্ট্রের অতীব জরুরী প্রয়োজনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিজ ক্ষমতাবলে যে আইন জারী করে থাকে তাকে অধ্যাদেশ বা Ordinance বলে।

এখন যেনে নেওয়া যাক,
#আইন ও অধ্যাদেশের মধ্যে পার্থক্য কীঃ
আইনঃ সংসদে বিল আকারে যে প্রস্তাব পাশ হয় সেটিই হল ‘আইন’।
#অধ্যাদেশঃ
দেশে যখন কোন জরুরি অবস্থা চলতে থাকে এবং আইন পাশ করার দরকার পড়ে অথচ সংসদের কোনো অধিবেশন থাকে না। তখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণীকেই অধ্যাদেশ বলে। এক্ষেত্রে নিয়ম হল, পরবর্তী সংসদ অধিবেশন শুরু হওয়ার ৩০ দিবসের মধ্যে অধ্যাদেশকে আইনে হিসাবে রুপান্তর করতে হয় নতুবা তা বাতিল হয়ে যায়।

(লেখাটি ভাল লাগলে শেয়ার করে রাখতে পারেন)

Leave a Comment