১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখিনি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তাই বাবার কাছে শুনেছি কিভাবে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া দেশে কিভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ডাকে যার যা ছিল তাই নিয়ে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং স্বাধীনতা অর্জন করেছেন।
আমাদের দেশে হঠাৎ যখন করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যবসা এমনকি জনজীবন স্থবির হয়ে গেলো তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালনকারী বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ পুষ্ট শিক্ষক সমাজ জাতির ভবিষ্যতের হাল ধরলো ।
কোন পরিপত্র দিয়ে নয়, কোন আদেশ বলে নয়, কারো অনুরোধে নয় বরং নিজের ভিতরের বঙ্গবন্ধু ও দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে যার যা ছিল তাই নিয়ে জাতির ক্রান্তিকালে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
হঠাৎ এক নোটিশে স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। ভাবলো হয়তো সাময়িক এই ছুটি। শিক্ষকরা শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের আদেশ মেনে সবাই বাড়িতে অবস্থান করতে থাকলেন।
কিন্তু যখন করোনার প্রাদুর্ভাব আরো বাড়াতে থাকলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর ছুটি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এ ব্যাপারটি জাতির বিবেক, মানুষ গড়ার কারিগরদের ভাবিয়ে তুলেছে।
তাদের ভালবাসার সন্তানদের জন্য চিন্তায় পড়ে গেলেন এবং তাদের জন্য কি করা যায় যার যার অবস্থান থেকে কিছু করার তাগিদ অনুভব করতে লাগলেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয় এর শিক্ষক তারা। হাতে ধরা দু’পাঁচজন জন ছাড়া তেমন কারো ভালো স্মার্ট ফোন ও নেই। অনেকের অন লাইন জগতের বিচরণ ই নাই ।
তাই বলে তারা থেমে থাকেননি। আধা ভাঙা, হয়তো সাউন্ড কোয়ালিটি ভালো না, দেওয়ালে কাগজ লাগিয়ে বোর্ড, বাসা/বাড়িতে, আড়ালে আবডালে, দরজার কাছে একটু ভালো জায়গায় শুরু করে দিল যা আছে তাই নিয়ে যুদ্ধ। এ যুদ্ধ সাইবার যুদ্ধ! এ যুদ্ধ ভার্সুয়াল যুদ্ধ! আমার, আমাদের সন্তানদের বাঁচানোর যুদ্ধ। যেখানে সৈনিক হল শিক্ষকবৃন্দ। ভিডিও করবে তার জন্য স্টান্ড নেই। কি হয়েছে সেক্ষেত্রে, কেউ চেয়ার এ মোড়া দিয়ে মোবাইল বসিয়ে, কেউ সিমেন্ট ও কংক্রিট এ লোহা লাগানো দন্ডে মোবাইল বেঁধে ক্লাস ভিডিও করলেন প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য।
হঠাৎ স্কুল থেকে ছুটি তে বাসায় অবস্থান করায় কারো কাছে বই ও ছিল না। সবাই করোনার মধ্যে স্কুলে গিয়ে বই, পাঠ পরিকল্পনা ইত্যাদি সংগ্রহ করে আনলেন।
নিজের টাকায় কলম , কাগজ কিনে উপকরণ ও তৈরি করলেন।মোবাইল এ ডাটা খরচ করে তা নিজেদের স্কুল পেইজ সহ সব গ্রুপে ছড়িয়ে দিলেন।
তাকিয়ে থাকলেন না কোন বরাদ্দের দিকে, চাইলেন না কোন আর্থিক সহযোগিতা ও কারো কাছে!
পরবর্তীতে অফিসের নির্দেশে এখন অনেক কিছু হচ্ছে কিন্তু সংকটকালীন শুরুতে আমাদের তথা শিক্ষকদের ভূমিকা কীভাবে দেখবেন? কী শিক্ষকরা বসে আসে?
আমি একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার করোনা যোদ্ধা প্রিয় শিক্ষকদের অনেক শ্রদ্ধা, ভালবাসা এবং স্যালুট জানাচ্ছি।
আমরা যদি এসব নিঃস্বার্থ ভালোবাসা গুলি কে সবাই সম্মান না জানাই তবে তা অকৃতজ্ঞতা পর্যায়ে চলে যাবে।
দোয়া করি পৃথিবী করোনা মুক্ত হয়ে আবার সুদিন ফিরে আসুক। আমরা আমাদের সন্তানদের কাছে ফিরে যেতে চাই। বলতে চাই অনেক ভালবাসি তোমাদের।
-বিলকিছ আক্তার রুমা,
সহকারী শিক্ষক,
বয়ড়া ছালাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,
ময়মনসিংহ সদর,
ময়মনসিংহ।