দৈনিক বিদ্যালয় | ২০২০
প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতিতে বয়সের কালো আইনের থাবাঃ
প্রিয় সহকর্মী বৃন্দ,
সালাম ও শুভেচ্ছা রইল। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ ১৯৯৪ ইং সন থেকে দীর্ঘ দিন ধরে বিভাগীয় পদোন্নতি হতে বঞ্চিত। এ নিয়ে অনেক লেখালেখি ও আন্দোলন সংগ্রামও হয়েছে। এই পদোন্নতির বিষয় নিয়ে যখনই আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করতে গিয়েছি, তখনই উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ আমাদেরকে বলতেন শিক্ষকেদের আবার পদোন্নতি কিসের? এটা মহান পেশা, আপনারা ওখানেই থাকেন, আপনাদের পদোন্নতির কোন প্রযোজন নেই! অথচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবার ক্ষেত্রে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং উপরে উঠার সিড়ি রয়েছে। কিন্তু আমাদের বেলায় বিধিবাম। দূঃখের বিষয় আমরা অদ্যবধি সে জট থেকে এখনোও বের হয়ে আসতে পারি নি।
যখন আমাদের সিনিয়র সচিব মহোদয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়ে এলেন, তখন থেকে আমরা প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়ে স্যারের সাথে কথা বলতে শুরু করেছি। স্যার আমাদেরকে বারবার বলেছেন আমি প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে নতুন যুগোপযোগী মানসম্মত একটা নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরী করার জন্য হাত দিয়েছি। এই নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরি হয়ে গেলে আপনাদের পদোন্নতির জট দুর হয়ে যাবে। আমরা এতোদিন সেই আশাতেই ছিলাম।
সিনিয়র সচিব মহোদয় যখন খসড়া নিয়োগ বিধিমালা সংশোধনের জন্য প্রস্তাবনা চাইলেন তখন আমরা প্রধান শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিভাগীয় পদোন্নতিতর ক্ষেত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল ও বয়সের সীমা না রাখার জন্য প্রস্তাবনা পাঠাই।
আমরা প্রধান শিক্ষকগণ দীর্ঘদিন ধরে নতুন নিয়োগ বিধিমালার অপেক্ষায় ছিলাম য়ে,নতুন নিয়োগ বিধিমালা তৈরি হয়ে গেলে আর আমাদের পদোন্নতির কোন সমস্যা থাকবেনা।
অথচ গতকাল ১১ আগষ্টে ‘দৈনিক সমকাল’ পত্রিকায় দেখলাম নতুন নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রী পরিষদে যেটা পাঠানো হয়েছে, সেখানে প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।
এটাই যদি হয় তাহলে প্রধান শিক্ষকের আদৌও পদোন্নতির সুযোগ থাকবে বলে আমার মনে হয় না।
কেননা, এখন থেকে সরাসরি আর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে না। এ কারণে সহকারী শিক্ষকদের সহ প্রধান হয়ে প্রধান শিক্ষক হতে তার বয়স পঞ্চাশের উদ্ধে চলে যাবে। তাদের আর পদোনতির কোন সুযোগ থাকবে না। আমরা যারা সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেছি আমাদের অধিকাংশের বয়স ৪৫ বছরের উপরে চলে গেছে।
প্রধান শিক্ষকদের সরাসরি সর্বশেষ নিয়োগ হয় ২০১৩ ইং সনে। তাদেরও ১/২ বছরের মধ্যে বয়স ৪৫ বছর পার হয়ে যাবে। তাহলে আমাদের পদোন্নতির সুযোগ কোথায়?
সকল ডিপার্টমেন্টে যদি চাকুরির শেষ দিন পর্ষন্ত পদোন্নতির সুযোগ থাকে তাহলে আমাদের বেলায় নেই কেন? বিভাগীয় পদোন্নতিতে আবার পরীক্ষা কিসের? আমরা তো পরীক্ষা দিয়েই যোগ্যতার প্রমান দিয়ে প্রধান হয়েছি। তাহলে পদোন্নতিতে ২য় বার আবার পরীক্ষা কিসের?
AUEO, UEO, ADPEO, DPEO দের পদোন্নতিতে কোন প্রকার পরীক্ষার প্রয়োজন হয়না। তাহলে প্রধান শিক্ষকদের বেলায় কেন এই বিমাতা সুলভ আচরণ? আমরা এই কালো আইন বাতিলের জন্য তীব্র অনুরোধ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে প্রধান শিক্ষকদেরকে ঐক্য বদ্ধ হবার জন্যও অনুরোধ করা হলো।
এবং এই কালো আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত ফেসবুক সহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা-লেখির মাধ্যমে প্রচার ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। আপনারা প্রস্তুত থাকুন।
এখানে সহকারী শিক্ষকদের স্বার্থও জড়িত আছে। কেননা প্রধান শিক্ষক পদ শুন্য নাহলে আপনারা যাবেন কোথায়? তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নতুবা আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবেনা। আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে থেকে পঁচতে হবে।
এ বিষয়ে আপনাদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও দিক নির্দেশনা কামনা করছি। সবাই ভালো থাকুন, ও সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদান্তে-মোঃ বদরুল আলম মুকুল, সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি।