পারুল আপা : হেলেন রেজা

গল্প

পারুল আপা রিটায়ার্ড করলেন আজ। সারা স্কুল জুড়ে উৎসব উৎসব ভাব। ফুলের তোড়ায়,রিবনে বাঁধা বইয়ে,শাড়ি,শাল ও ছাত্রছাত্রী দের দেওয়া উপহারে কেমন একটা উৎসবের আমেজ। রজনী গন্ধার গন্ধে সারা ঘর ম’ ম’ করছিল। আমার এই রজনীগন্ধার গন্ধকে অদ্ভুত এক বৈপিরীত্যের সংযোজক বলে মনে হয়। যেমন সে বিবাহের কমনীয় অনুরাগের আবহ রচনা করে তেমনি বিচ্ছেদের বেদনাকেও গভীর মর্মস্পর্শী করে তোলে।

অনুষ্ঠান শেষে পারুল আপাকে আমাদের বাড়িতে ধরে নিয়ে এলাম। সে সময় পারুল আপার শরীরের স্পর্শ,গন্ধ আশ্চর্য কোমল এক অনুভূতি আমাকে ছেয়ে ফেলল। আমার মনে পড়ল যেদিন আমি স্কুলে জয়েন করি পারুল আপা আমাকে বুকে টেনে নিয়ে মেয়ের মত আদর করলেন। এর পর থেকে আমি তার মেয়েই হয়ে গেলাম। এবং বিভিন্ন উৎসব পার্বণে বিভিন্ন প্রিয় জিনিস উপহার দিতেন।

আমার মনে প্রশ্ন জাগতো সবসময় কেন করেন আমার জন্য এত? পারুল আপা বিয়ে করেন নি। তাই ছেলে বউ,মেয়ে জামাই নিয়ে স্বাভাবিক ঘরকন্না তাঁর ছিলনা। হয়ত আমাদের প্রেমপ্রীতি ভালবাসা গুলো ভূগর্ভস্থ সঞ্চিত বাষ্পপুঞ্জের মত। বহির্গমনের একটা পথ খোঁজে। তাই হয়ত আমাকে মেয়ে ভেবে তার সঞ্চিত স্নেহ ভালবাসা উজার করে দিয়েছিলেন।

আমার বাবা তিনি একজন প্রখ্যাত সাহিত্যিক। বিদায় অনুষ্ঠানে এসেছিলেন প্রধান অতিথি হয়ে।

পারুল আপা আর আমি আমাদের বাড়িতে আমার রুমে বসে গল্প করছিলাম। বিকেলে বাবা এলেন আমার সাথে দেখা করতে। বাবা ঢুকতেই পারুল আপা কেমন বিব্রত হয়ে নড়েচড়ে বসে বলে ফেললেন,তুমি এখানে এলে কেন? আমরা মা মেয়ে বেশ গল্প করছিলাম৷! বাবা চিরকালই রসিক ব্যক্তি। বললেন,”বাবা-মা-মেয়ে মিলে গল্প হয়না?

তৎক্ষণাৎ আমার একটা সুপার সেন্স কাজ করলো। শুনেছিলাম, পারুল আপা যৌবনে কাউকে একবার ভালবেসে প্রবঞ্চিত হয়েছিলেন। তাঁর একটি কন্যা সন্তানও হয়েছিল। আর আমার মা’র কোনো সন্তানাদি হয়নি। বাবা নাকি এক শিশুকন্যা কে য়্যাডপ্ট করে মার কোলে তুলে দিয়েছিলেন। সন্তান স্নেহে কাতর মা জানতে চাননি আমাকে কোথায় পেয়েছিলেন বাবা। আমার মা একথা আমাকে বলেছিলেন। তাহলে কি আমার বাবাই——-!

READ MORE  করচ ও একটি গ্রামের গল্পঃ -রুবি বিনতে মনোয়ার

ফেয়ার ওয়েলের কিছু রজনী গন্ধা খাটে পরেছিল।আমি তারই কয়েকটা নিয়ে বাবার হাতে দিয়ে বললাম,”পারুল আপা কে দাও। তুমি তো বিদায়ের দিনে কিছু তাকে দিলেনা বাবা!

আরো পড়ুনঃ বাপ্পি খানের গল্প : একটি বৃষ্টিভেজা রাত : ১ম পর্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *