সুবোল বাবু গণিতের মাস্টার : হেলেন রেজা

জীবনের সব কিছু যদি গণিতের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলত, তাহলে আর যাই হোক তাকে জীবন বলা যেতনা। ভাগ্যবিধাতার কারিকুরি তাহলে বাহাদুরি হারাত। আর মানুষও স্বচ্ছন্দচিত্তে অংকের ছকে কম্পিউটারে ফেলে ঘটনা সাজিয়ে বিয়ে করা,বাড়ি করা,ছেলেমেয়ে মানুষ করা কাজগুলো পর পর করে ফেলতো। এসব কথা সুবোল বাবু শুয়ে শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলেন। সুবোল বাবু গণিতের মাস্টার।
গণিত তো নিয়ম মেনেই চলে।ঠিক একসময় উত্তরে এসে যায়। কিন্ত তাঁর ছেলেমেয়ে কারুরই ক্ষেত্রে তো অংক মিললো না। মেয়ে শ্যামলী তার কথা তোয়াক্কা না করে এক বেকার ছেলেকে বিয়ে করেছে। অথচ এই মেয়েকে কত মহিয়সী নারীর গল্প শুনিয়েছেন। ছেলে গণিতে এমএসসি তে ফার্স্টক্লাস হলোনা। ভেবেছিলেন ছেলে অধ্যাপক হবে। খরচ তো করেন নি কম টাকা। তিনি নিজে পড়িয়েছে এ ছাড়াও দুটো টিউটরের ব্যবস্থাও করেছিলেন।
ছেলের রেজাল্টের পর কিছুটা বকাবকি তো মুখেই এসে গেলো। অনিচ্ছা থাকলেও বিরক্তি প্রকাশ করলেন। অধ্যাপক বানানোর স্বপ্ন ঘুচে গেল। ছেলেটার মন খারাপ এমনিতেই ছিল। বাবার এইসব কথায় বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল। তিনি ইচ্ছে করে পুলিশে খবর দেননি। একান্ত বিশ্বাস,সে একদিন ফিরে আসবে বা সংবাদ দেবে। তাঁর জ্ঞান-উপদেশ বৃথা হতে পারে না। চোখে পানি এসে যাচ্ছিল তাঁর। স্ত্রী করুণার মুখের দিকে তাকানো যায় না। কিছুই খাচ্ছেনা,শীর্ণ মুখ,একেবারে নির্বাক।বাড়িতে তো প্রায় অরন্ধন। ও ঘরে ফোন বাজছে। কেউ ধরছেনা। অগত্যা সুবোল বাবু গিয়ে তুললেন। ও পাশ থেকে একটি যুবকের কন্ঠ বলল,শোভন আমাদের কাছে আছে,আপনি ভাববেন না। ওকে না জানিয়েই আপনাকে ফোন করলাম। ওকে আমরা বলেছি ফার্স্টক্লাস না পেলে জীবন বৃথা হয়ে যায়না। বলেই ছেলেটি ফোন কেটে দিল। সুবল বাবু অনেক আশ্বস্ত হলেন। স্ত্রীকে সংবাদ টা জানালেন। স্ত্রীকে বললেন,দ্যাখো,ফার্স্টক্লাস না পেলে জীবন বৃথা হয়ে যায় না। স্ত্রী বললেন,সবাই কে ফার্স্টক্লাস পেতে হবে তার মানে হয়না। না পেলে জীবনে কিছুই হলোনা এমন ভাবার কারণ নেই। সুবোল বাবু অনেকটা হালকা হলেন যেনো।
এখন শোভন সুবোল বাবুর স্কুলেরই শিক্ষক হয়েছে। তবে বৃদ্ধ বাবা মা,ছেলে পুলে,ঘর-সংসার দেখে নিয়ম করে। তার বিপন্ন মুখের দিকে তাকিয়ে সুবল বাবু ভাবেন,বিদেশে থাকা হাসিমুখের ছেলের থেকে হয়তোবা এই ভালো। কেননা কোনটা যে ভাল অংক কষে বলা যায় না। জীবনের গণিতশাস্ত্র সব বলতে পারেনা।

 

Leave a Comment