বাপ্পি খানের গল্প : একটি বৃষ্টিভেজা রাত : ১ম পর্ব
বাপ্পি খানের গল্প : একটি বৃষ্টি ভেজা রাত : পর্ব ০২
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, বাইরে খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে তাইনা? মেয়েটি মৃদুস্বরে বলল,হ্যা।
– রোমাঞ্চকর রাত।
কথাটা বলেই লজ্জা পেলাম। আজ যে আমার হয়েছে টা কি! একটু আগেই হুট করেই ওর হাত ধরে ফেলেছি। এখন আবার মুখ ফসকে এমন একটা কথা বলে ফেললাম। কি জানি এরপর আরো ভয়ংকর কিছু করে ফেলি নাকি! মেয়েটি বলল,আপনি বিয়ে করেন নি? -না করিনি। এখনো পড়াশুনাই শেষ করতে পারিনি। -ও আচ্ছা।বাসায় কে কে থাকে? – বাবা মা,ভাইয়া ভাবি আর আমি। আর আপনার? -আমরা দুবোন, আব্বু আম্মু আর দাদা দাদি। এরপর দুজনেই অনেক্ষণ চুপচাপ। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। বাইরে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে। থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বজ্রপাত ও হচ্ছে। মেয়েটি কি বজ্রপাতের শব্দে ভয় পায় না?বললাম, আপনার নামটাই তো জানা হলোনা। – আমি নীলাম্বরী। -বাহ! খুব সুন্দর নাম তো! কিসে পড়েন? -অনার্স ফাস্ট ইয়ারে।
এরপর আবারো দুজনেই অনেক্ষণ চুপচাপ। গল্প করার জন্য একটা টপিক খুঁজে বের করা দরকার। এভাবে তো চুপচাপ বসে থাকাও যায় না। কিন্তু কি বিষয়ে গল্প করা যায়? আমার তো এই মুহুর্তে মেয়েটি ছাড়া আর কিছুই মাথায় আসছে না। শুধু নীলাম্বরীর মুখটা দেখতে ইচ্ছে করছে। ঘরটা একদম গাঢ় অন্ধকার হওয়ায় ও আমার চেয়ে কতটা দূরত্বে বসে আছে তাও দেখতে পাচ্ছিনা। তবে আন্দাজ করতে পারছি। ও আমার পাশেই বিছানায় পা তুলে বসে আছে নিশ্চয় ই। গলার স্বর খুব কাছে মনে হওয়ায় বুঝতে পেরেছি ও আমার একদম কাছেই বসে আছে। ইচ্ছে করছে ওকে একটি বার ছুঁয়ে দেখি। নীলাম্বরী বলল,আপনাকে একটা পারসোনাল প্রশ্ন করি?
– অবশ্যই,বলুন।
– আপনার গার্ল ফ্রেন্ড নেই?
– নাহ, নাই।
– কেন নাই?
– ছিল একজন। গত বছর ব্রেক আপ হয়ে গেছে।তারপর আর নতুন করে রিলেশনে জড়ানো হয়নি।আপনার?
– আমি কখনোই রিলেশন করিনি। ছোট থেকেই অনেক প্রপোজাল পেয়েছিলাম কিন্তু ভেবেছিলাম আগে অনার্সে উঠি, তারপর ওসব।
– এখন তো উঠেছেন। এখন প্রেম করবেন?
আমার প্রশ্ন শুনে মেয়েটি শব্দ করে হেসে উঠল। আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। তবুও মনে হতে লাগলো মাঝেমাঝে একটু নির্লজ্জ হতেও হয়। সবসময় লজ্জা পেলে কখনো প্রেম করা যায় না।তাই আরেক টু সাহস নিয়ে বললাম, হাসলেন যে? প্রেম করবেন না?
– হুম করবো। কিন্তু সেরকম কাউকে পেতে হবে তো। আগে পাই, তারপর ভেবে দেখবো। -এত কাছে এমন হ্যান্ডসাম একটা ছেলে বসে আছে।হাত বাড়ালেই যাকে ছোঁয়া যায়। তবুও আর কাউকে খুঁজতে হবে?
কথাটা বলেই আমি মুখ টিপে হাসলাম। জানিনা এরপর মেয়েটার রিয়্যাক্ট কেমন হবে! কিন্তু খুব ভয় হতে লাগলো। যদি ও রেগে যায়? কিন্তু আমার ভয় কাটিয়ে দিয়ে নীলাম্বরী বলল, এত দ্রুত বুঝি কারো প্রেমে পড়া যায়?
– আমিতো পড়ে গেছি। – কার? – বারে! একটু আগে যার হাত স্পর্শ করলাম। ওই বৃষ্টিস্নাত চেহারা দেখেই তো আমার মনের ঘন্টা বেজে গেছে। নীলাম্বরী বোধহয় খুব লজ্জা পেয়েছে। লাজুক লাজুক স্বরে বললো, সত্যি!
– হুম তিন সত্যি।
একথা বলার পর আমার কেমন যেন লাগতে শুরু করলো। বুকের ভিতরে ঢিপঢিপ করছে। লাগামহীন ভাবেই তো ওকে প্রপোজ করে বসলাম। জানিনা কিভাবে নেবে ব্যাপার টা! যদি রাগ করে উঠে চলে যেতে চায়? আমি কি ওকে আটকাতে পারবো? ওর সামনে দাঁড়িয়ে কিভাবে আকুতি করে বলবো, আমাকে ফেলে যেও না। আমি সত্যিই প্রথম দেখাতেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।
এমন সময় কাছেই কোথাও খুব জোরে শব্দ করে বাজ পড়লো। নীলাম্বরী ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠল, ও মাগো! আপনি কোথায়?
ওকে ভয় পেতে দেখে আমি নিমেষেই অন্ধকারেই ওকে ধরে ফেললাম। একেবারে বুকের কাছে। ওর নিঃশ্বাস পড়ছে আমার গলায়। মুহুর্তেই আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো। জীবনে কখনোই এত কাছে কোনো মেয়েকে পাইনি। একদম আমার বুকে লুকিয়ে পড়েছে নীলাম্বরী। শক্ত করে জাপটে ধরে আছে। আমার এত ভালো লাগছে যা বলে বুঝানো সম্ভব না। এভাবে এমন আকর্ষণীয় একটা রাত, বুকের মাঝে একটা অপরূপ মেয়ে। কি যে অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে! ইচ্ছে করছে আজীবন এভাবেই ওকে বুকে চেপে রাখি। এই রাতটা যেন কখনো শেষ না হয়। যুগ যুগ ধরে না ফুরালেও আপত্তি নেই তাতে। এমন বৃষ্টির একটা নেশাভরা রাতে এ কোন নেশা হয়ে কাছে এলে নীলাম্বরী?
এভাবে কেটে গেলো অনেক্ষণ।নীলাম্বরী নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,সরি। আমি ওকে ছেড়ে দিলাম। ও একটু দূরে সরে বসলো। অন্ধকারেই মনে হচ্ছে ও অনেক বেশি লজ্জা পেয়েছে। ইচ্ছে করছে ওর লাজুক মুখটা দেখি। কিন্তু এমন অন্ধকারে কিভাবে দেখবো? আমি বললাম, জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়েকে জড়িয়ে ধরলাম। এই কাজটায় এতটা ভালো লাগা মিশে থাকে আমার জানা ছিল না।নীলা,তুমি আমার উপর রেগে যাচ্ছো? – না না, রাগ করবো কেন? প্রেমে পড়ে যাওয়াটা তো স্বাভাবিক তাইনা? তাছাড়া এমন ঝড় বৃষ্টির রাতে একা একটা মেয়েকে কাছে পেলে কি অবস্থা হয় আমি বুঝতে পারছি।
নীলাম্বরী’র কথা শুনে আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম।আমার ব্যাপার টা তাহলে ধরে ফেলেছে? কিন্তু কি আর করার? মনকে বুঝানো যে অনেক কষ্টের আর খুবই কঠিন। নীলাম্বরী’র নেশায় মেতে উঠছি ক্রমাগত। জানিনা এরপর কি হবে আমার! নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ওর ওই বৃষ্টিস্নাত শরীরে! শেষ মুহুর্তে পারবো কি নিজেকে সামলাতে? যদি কোনো ভুল হয়ে যায়? চিন্তাটা মাথায় আসতেই একটু দূরে সরে এসে বসলাম। নীলাম্বরী ও হয়ত বুঝতে পেরেছে ব্যাপার টা। ও একটু চুপ থেকে বলল, আমি বরং ওই ঘরে যাই। আপনি ঘুমান। কথাটা বলেই ও বিছানা থেকে নেমে পড়লো। আমি দেখলাম ও দরজার সামনে চলে গেছে। তারপর বলল,শুভরাত্রি।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। আমার বুকে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে এখন আবার শুভরাত্রি বলা হচ্ছে? কিন্তু কিছুই করার নেই। একটা মেয়েকে তো আর জোর করে বুকে চেপে রাখতে পারিনা। কিন্তু মনটা বড্ড ছটফট করছে। অনেক্ষণ বিছানায় এপাশ ওপাশ করলাম। পুরো বাড়িটা ফাকা, তারউপর প্রবল বর্ষণ হচ্ছে বাইরে। পাশের রুমে নীলাম্বরী’র মত একজন মেয়ে। যাকে দেখে প্রেমেও পড়ে গেলাম, কি করে ঘুমানো সম্ভব?
প্রায় পনের মিনিটের মত বিছানায় ছটফট করলাম। অস্থির লাগছে ভীষণ। নীলাম্বরী কে দেখার জন্য মনটা ছটফট করছে। নাহ,এভাবে শুয়ে থাকা যায়না।নীলাম্বরীর মুখটা একবার দেখেতেই হবে। ওকে না দেখা অব্দি আমার ঘুম আসবে না আমার। দ্রুত দরজার কাছে চলে আসলাম। দুই রুমের মাঝখানের দরজাটা ও খোলাই রেখেছে। ওর রুমে সৌর বিদ্যুতের মিটিমিটি আলো জ্বলছে। সেই টিমটিমে আলোয় যা দেখলাম,তাতে আমার হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে গেলো। দ্রুত হার্টবিট বাড়তে লাগলো। চলবে……
(৩য় পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। ভালো লাগলে কমেন্টে জানাবেন!)