প্রাথমিক শিক্ষার প্রাণপুরুষ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সিনিয়র সচিব স্যার প্রাথমিক শিক্ষাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন এবং আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করেন। যিনি প্রাথমিক শিক্ষাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখেছেন।
যিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভালবাসেন। যিনি দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পেরেছিলেন, অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে অনুভব করেছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। তিনি ইতিমধ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। তিনি আর কেউ নন। তিনি মাননীয় সিনিয়র সচিব জনাব আকরাম আল হোসেন স্যার।
আলহামদুলিল্লাহ প্রাথমিক শিক্ষার আর এক দিকপাল আমাদের শ্রদ্ধেয় অভিভাবক মান্যবর সদ্য সাবেক মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ স্যার প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন দিক ও বিভাগের উপর সুশীতল ছায়া বিস্তার করে ছিলেন তিনি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের ও প্রাথমিক শিক্ষার মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। সফল কর্মজীবনের স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ায় তারই পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কাজের সফল বাস্তবায়নের গুরুদায়িত্ব পালন করছেন আমাদের মান্যবর অতিরিক্ত মহা পরিচালক (মহাপরিচালক দায়িত্বপ্রাপ্ত) জনাব সোহেল আহমেদ স্যার এই দুইজন মহান ব্যক্তির প্রাথমিক শিক্ষার প্রত্যেক পরতে পরতে রয়েছে দুর্দান্ত পদচারণা।
তাই প্রাথমিক শিক্ষার এই দুই মহান কর্ণধর দুইজন কান্ডারী প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন ‘সমন্বিত নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা ২০২০’।
# এটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন খুব সহজ কাজ নয়। অত্যন্ত দুরূহ ও কঠিন। তবে এটি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হতে যাচ্ছে। আমাদের এই দুই মহান অভিভাবকের সাহসিকতা, দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে আগামী ২৯অক্টোবর ২০২০ এর মধ্যে প্রনীত হতে যাচ্ছে উক্ত “সমন্বিত নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা” মান্যবর সিনিয়র সচিব স্যার আশা প্রকাশ করেছেন সমন্বিত বিধিমালাটি প্রণীত হলে শিক্ষকদের গ্রেড ও পদোন্নতি নিয়ে কোন সমস্যা থাকবে না।
# অন্তরের অন্তস্থল থেকে এই দুই মহান অভিভাবক সহ সংশ্লিষ্ট সকল অভিভাবকদের প্রতি রইল ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। সঙ্গত কারণেই প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি, সিনিয়রিটি ও গ্রেডেশন নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার আজকের লেখার অবতারণা।
# ২২ আগস্ট ২০২০ তারিখে প্রধান শিক্ষকদের ভার্চুয়াল সভায় মাননীয় সিনিয়র সচিব স্যারের নিকট থেকে জানা যায় যে, তিনি প্রমোশন নীতিমালা প্রণয়নে অত্যন্ত আন্তরিক।
স্যারের নিকট শিক্ষক নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবনার ছিল।
১। ২৬ বছরের পদোন্নতি বঞ্চনার অবসানে শর্তহীন পদোন্নতি।
২। বকেয়া টাইমস্কেল সমস্যার সমাধান ও বেতন সমতাকরণ।
৩। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড মর্যাদা প্রদান ও দশম গ্রেডে বাস্তবায়ন।
৪। ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধিমালা সংস্কার
৫। ১৯৯৪ সালের কালো আইন বাতিল।
৬। পদোন্নতির পথে ৪৫ বছরের বাধা দূরকরন।
৭। প্রধান শিক্ষকদের চাকুরীর শেষ দিন পর্যন্ত পদোন্নতি দ্বার উন্মোচন ইত্যাদি।।
# আলোচ্য সমস্যা সমূহ সমাধানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ের সেন্ড করা খসড়া নিয়োগ বিধিমালা ফেরত এনে আরো যুগোপযোগী ও শিক্ষক বান্ধব করার জন্য চূড়ান্ত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, # জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর ২৫ নং অধ্যায়ে “শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার” শিরোনামে বলা হয়েছে মেধা দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্বাচিত শিক্ষকদের শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদায়ন প্রদান করা হবে এবং তাদের পদোন্নতির সুযোগ থাকবে।
পদোন্নতির ভিত্তি হিসেবে জাতীয় শিক্ষনীতীতে
নিম্নোক্তবিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছেঃ
শিক্ষক প্রশিক্ষণের সাথে পদোন্নতির যোগসুত্র স্থাপন করা আবশ্যক বলে উচ্চতর ডিগ্রিধারী এবং প্রশিক্ষিত যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সরাসরি নিয়োগ এবং ত্বরান্বিত পদোন্নতি মাধ্যমে উচ্চতর পদ পূরণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে পদ উন্নীত করা হবে এর জন্য যথাযথ বিধি-বিধান ও তৈরি করা হবে। “প্রয়োজনে পদ উন্নীত করা হবে এর জন্য যথাযথ বিধি-বিধান তৈরি করা হবে।”
# শিক্ষার সকল পর্যায়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা এবং শিক্ষার সকল পর্যায়ে তাদের শিক্ষাকতার মান বিবেচনায় আনা হবে।
# গৃহীত প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সর্বস্তরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা হবে।
# সুতরাং স্পষ্ট দেখা যায় যে, শিক্ষকদের পদোন্নতির ভিত্তিসমূহঃ ক) জ্যেষ্ঠতা। খ)শিক্ষার মান। গ) গৃহীত প্রশিক্ষণ সমূহ। ঘ) উচ্চতর ডিগ্রী ঙ)শিক্ষকদের মেধা দক্ষতা।
# ২২আগস্ট ২০২০ প্রধান শিক্ষকদের ভার্চুয়াল সভায় মাননীয় সিনিয়র সচিব স্যার নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিলেন, “প্রধান শিক্ষকদের উপজেলা ও জেলা ভিত্তিক গ্রেডেশন আছে তবে জাতীয়ভাবে জ্যেষ্ঠতার তালিকা ও গ্রেডেশন নাই। এটা কিভাবে সমন্বয় করা যায় তা তিনি ভেবে দেখতে চেয়েছিলেন।
তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন শতভাগ না হলেও কিছু পদে সরাসরি নিয়োগ হবে এবং বাকি সব পদে প্রমোশন এর মাধ্যমে পদ পূরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক মহোদয় বলেছিলেন, কোন একটা কিছু কে সিনিয়রিটির ভিত্তি ধরে আমরা একটা ওয়ে আউট বের করে প্রমোশন এর জায়গাটা পরিষ্কার করে দিয়ে যেতে পারবো ইনশাল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে আমার ব্যক্তিগত অভিমতঃ
# সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সিনিয়রিটি নির্ধারণে একটি প্রচলিত ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। শিক্ষানীতিতে জ্যেষ্ঠতাকে পদোন্নতির মূল ভিত্তি ধরা হয়েছে। তাই যোগদানের তারিখ থেকে সিনিয়রিটি কাউন্ট হবে। একইদিনে বা তারিখে কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী যোগদান করলে জন্ম তারিখ অনুযায়ী সিনিয়রিট কাউন্ট হবে।
# বাংলাদেশে ৬৪০০০ এর কিছু বেশি প্রধান শিক্ষকের পদ রয়েছে। প্রতি প্রধান শিক্ষককে তাদের জয়েনিং ডেট অনুযায়ী সিনিয়রিটির ক্রমিক নম্বর প্রদান করা যেতে পারে।
# শিক্ষানীতিতে অভিজ্ঞতাকে পদোন্নতির অন্যতম ভিত্তি ধরা হয়েছে। সেহেতু ৪৫বছরের বয়সের বাধা না রেখে অন্য পেশাজীবীদের মত চাকরির শেষ দিন পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়।
# শিক্ষানীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণ কে পদোন্নতির অন্যতম ভিত্তি ধরা হয়েছে। তাই পদোন্নতির জন্য গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত করা যেতে পারে।
# অন্যান্য সরকারি পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে প্রমোশনের জন্য যেভাবে এসএসবি অর্থাৎ সুপ্রিম সিলেকশন বোর্ড গঠন করা হয় এক্ষেত্রেও তেমনি সুপ্রিম সিলেকশন বোর্ড গঠন করে পদোন্নতি প্রদান করা যেতে পারে।
# সুপ্রিম সিলেকশন বোর্ড সিনিওরিটি তালিকা ও গ্রেডেশন তালিকা থেকে সমন্বয় করে পদোন্নতির সুপারিশ করতে পারেন।
# জ্যেষ্ঠ অভিজ্ঞ প্রধান শিক্ষক বৃন্দ যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় টাইমস্কেল পেয়ে দশম, নবম ও অষ্টম গ্রেডে রয়েছেন তাদেরকে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি দিলে সরকারের অতিরিক্ত কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে না।
# শিক্ষানীতিতে যেহেতু নির্বাচিত শিক্ষকদের শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে পদায়ন ও পদোন্নতির কথা বলা হয়েছে সেহেতু পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টির জন্য চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যেতে পারে।
# তাছাড়া প্রস্তাবিত নীতিমালায় সহকারি শিক্ষক বৃন্দ যেমন সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে, সহকারি প্রধান শিক্ষক বৃন্দ যেমন প্রধান শিক্ষক পদে এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বৃন্দ যেমন উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পরীক্ষা ছাড়াই শতভাগ পদোন্নতি পাবেন বলে আশা করা যায় ঠিক তেমনি প্রধান শিক্ষকগণকেও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে ।
# আমাদের প্রাণ প্রিয় অভিভাবক মান্যবর সদাশয় সিনিয়র সচিব ও মান্যবর মহাপরিচালক স্যার, আপনাদের সততা, দক্ষতা, আন্তরিকতা, যোগ্যতা ও সাহসিকতা, দূরদৃষ্টি এবং অন্তর্দৃষ্টি, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তি, আপনাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ক্ষমতা, প্রাথমিক শিক্ষা তথা প্রাথমিকের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনাদের গভীর মমত্ববোধ আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে।
# আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনারা ১৯৯৪ সাল হতে ২৬ বছরের পদোন্নতি বঞ্চিত প্রধান শিক্ষকদের “সমন্বিত নিয়োগ ও পদোন্নতি নীতিমালা ২০২০ এ ৪৫ বছর বয়সের বাধা দূর করে ১০০ ভাগ পদোন্নতির দ্বার উন্মোচন করে দিবেন।
# আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের ইতিহাসে আপনাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
-লিপি খাতুন, প্রধান শিক্ষক, প্রতিভাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দিঘলিয়া, খুলনা। ও সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি, দিঘলিয়া উপজেলা শাখা, খুলনা।
আরও পড়ুনঃ টাইমস্কেল জটিলতায় বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক কল্যাণ সমিতি জরুরী সভা আহবান
প্রাথমিকের ৪৮৭২০ জন শিক্ষকের টাইমস্কেল বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত : নোটিশ প্রদান