প্রাথমিকের শিক্ষক ও সরকারী চাকুরীজীবীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন করার নিয়ম

চাকুরীর বিধান

পুলিশ ভেরিফিকেশন সরকারি চাকুরীজীবীদের চাকুরী স্থায়ী করণ, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট, লাইসেন্স গ্রহন সহ নানাবিধ কাজে একান্ত বাধ্যতামূলক। আজ আমাদের আলোচনা পুলিশ ভেরিফিকেশন এর সকল খুটিনাটি নিয়ে।
ইতিমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণে পুলিশ ভেরিফিকেশন করার জন্য গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটা শুধুমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নয় বরং সকল চাকুরীজীবীদের জন্য প্রয়োজনীয়।

[উল্লেখ্য, এই লেখার শেষের দিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।]

পুলিশ ভেরিফিকেশন কীঃ

সাধারণত চাকুরী, পাসপোর্ট, লাইসেন্স বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আবেদনকারী কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যাদি সঠিক আছে কিনা তা পুলিশ কর্তৃক যাচাই করাকে ভেরিফিকেশন বা পুলিশ কর্তৃক প্রদত্ত সত্যতা প্রতিপাদন বলে।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে যা যাচাই করেঃ

১. পড়ালেখা সংক্রান্ত। ২. ব্যক্তিচরিত্র সংক্রান্ত।
৩. প্রার্থীর নামে কোন ধরনের ফৌজদারী মামলা আছে কিনা। ৪. তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য কি না। ৫। থানা রেকর্ডে তার সম্পর্কে কোন কিছু লিখিত আছে কি না। ৬। বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই। উক্ত তথ্য সমুহ পুলিশ সুপার অফিসের জেলা বিশেষ শাখা থেকে উক্ত সরেজমিনে তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ পূর্বক রিপোর্ট সংগ্রহ করে রিপোর্ট প্রদান করা হয়৷ 

সরকারি কর্মচারী কেন করবেন পুলিশ ভেরিফিকেশনঃ

ক. চাকুরী স্থায়ীকরণ করতে। খ. চাকুরী স্থায়ীকরণ ব্যাতিত পদোন্নতি দেওয়ার নিয়ম নেই। গ. আপনি মারা গেলে আপনার পরিবার ৮ লক্ষ টাকা সরকারি অনুদান প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে। ঘ. বিদেশ ভ্রমনে যাওয়া যাবে না।

যে যে ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ঃ

ক.সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি (ঐচ্ছিক) প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে।
খ. পাসপোর্ট গ্রহণ।
গ. বিভিন্ন ধরণের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে।
ঘ. বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা-কে.পি.আই ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন এর আবেদন পত্রে প্রার্থীর ঠিকানাঃ

পুলিশ ভেরিফিকেশনে প্রার্থীকে তার স্থায়ী ও অস্থায়ী উভয় ঠিকানাই দিতে হয়। স্থায়ী ঠিকানা বলতে বুঝায় প্রার্থীর নিজ নাম, পিতার নাম বা দাদার নামীয় বাড়ি সহ যে কোনো ভূ-সম্পত্তি, যেখানে প্রার্থীর অধিকারসত্ত্ব এবং বসতবাড়ি রয়েছে। যে ভূ-সম্পত্তিতে প্রার্থীর নিজের অধিকারসত্ত্ব ও বসতবাড়ি নাই, এমন কোনো ঠিকানায় প্রার্থী বসবাস করলে তা অস্থায়ী ঠিকানা হিসেবে বিবেচিত হয়।

READ MORE  এসিআর কী? সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এসিআর এর ইতিহাস

আর যে ঠিকানা দিতে হয়ঃ

স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ছাড়াও একজন সাধারণত প্রার্থী বিগত ৫ বছর যেসব ঠিকানায় ৬ মাসের অধিক সময় অবস্থান করেছেন এবং প্রার্থী ১৫ বছর বয়স হতে যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করেছেন বা যে সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন ও অধ্যয়নকালীন বা কর্মরত থাকাকালীন সময়ে যেসব ঠিকানায় অবস্থান করেছেন, সেগুলোও উল্লেখ করতে হয় পুলিশ ভেরিফিকেশনে।

প্রার্থীকে থানায় যেতে হয় কিনাঃ

এক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের তদন্তের সময় প্রার্থীকে সাধারণত থানায় যেতে হয় না; তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপনে ও প্রকাশ্যে প্রার্থীর উল্লিখিত ঠিকানা সমূহে সরজমিনে ভেরিফাই করে থাকেন। হ্যা, তবে ইনকুয়ারিকালে প্রার্থী যদি তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদা মতে তাৎক্ষনিক ভাবে কোনো প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে পরবর্তিতে ঐ নথি পৌঁছে দিতে আলোচনা সাপেক্ষে থানায় যাওয়া লাগতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে যা যা লাগেঃ

পুলিশ ভেরিফিকেশনের তদন্তের সময় কোনো কোনো ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রার্থীর নিকট হতে কতিপয় ডকুমেন্ট চাইতে পারেন। যেমনঃ প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানার পক্ষে সে বাড়ির দলিলের কপি, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ওয়াসার বিল, টেলিফোন বিল, ইত্যাদির কপি। এছাড়াও, প্রর্থীর ভি-রোলে বা প্রার্থীর তথ্য সম্বলিত ফর্মে যে সব তথ্য প্রদান করা হয়েছে, সেগুলোর যাচাই বা প্রমাণের জন্য সেগুলোর পক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলাদি।

পুলিশ ভেরিফিকেশনে কতদিন সময় লাগেঃ

এটি নির্ভর করে সাধারণত কত জায়গায় এই ভেরিফিকেশন করতে হয় তার উপর। যদি শুধুমাত্র একটি মাত্র পুলিশ অধিক্ষেত্রের মধ্যে ভেরিফিকেশন করতে হয়, তাহলে সাধারণত তিন দিনের মধ্যেই তদন্ত সম্পন্ন করা যায়। তবে, যদি প্রার্থীর স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন ভিন্ন জেলায় হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা চাকুরির প্রতিষ্ঠানও ভিন্ন ভিন্ন জেলায় হয়, এ ক্ষেত্রে ১৫ দিন বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন চলা কালে প্রার্থী হয়রানীর শিকার হলেঃ

READ MORE  জিপিএফ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য : ইএফটিতে জিপিএফ চেক করার নিয়ম

পুলিশ ভেরিফিকেশন চলাকালে কোন প্রার্থী যদি তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক কোনো প্রকার হয়রাণীর শিকার হলে ঐ তদন্তকারী কর্মকর্তার সরাসরি নিয়ন্ত্রনকারী কর্মকর্তার নিকট বা বিশেষ পুলিশ সুপার (ভিআর) অথবা অতিরিক্ত আইজিপি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, বাংলাদেশ পুলিশ, রাজারবাগ, ঢাকা বরাবর লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ জানানো যায়। [তথ্য সূত্র: ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ এর ফেসবুক পেইজ]

এবার আসা যাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকুরী স্থায়ীকরণে কী কী চাওয়া হয়েছেঃ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বিগত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র বুনিয়াদে এক নোটিশ জারি করেছে। তাতে চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্য যা যা চাওয়া হয়েছে তা নিম্নে তুলে ধরা হলঃ

১. পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্ম ২ প্রস্থ।
২. ছবি: পাসপোর্ট সাইজের ২ কপি রঙ্গিন ছবি।
৩. শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল সনদের ফটোকপি ২ প্রস্থ।
৪. প্রথম যোগদানের ফটোকপি ২ প্রস্থ।
৫. জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি ২ প্রস্থ।
৬. নাগরিক সনদ ২ প্রস্থ।

নিম্নে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফর্মের নমুনা কপি:




দৈনিক বিদ্যালয় এর নিউজ পড়তে গুগলে ‘দৈনিক বিদ্যালয়’ বাংলায় বা dainikbidyaloy.com ইংরেজিতে লিখে সার্চ দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *