প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি : বিপুল আশা ও কিছু অস্পষ্টতা

চাকুরী

দৈনিক বিদ্যালয় : বহুল প্রত্যাশিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০/১০/২০২০ তারিখ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এতে করে ঝিমিয়ে পড়া চাকুরি প্রত্যাশীরা আবার নড়েচড়ে বসতে শুরু করেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরি প্রত্যাশী সকলের প্রতি শুভ কামনা রইল।

সকল শিক্ষক ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার সিস্টেমে বেতন পাবেন

প্রত্যাশিত বিজ্ঞপ্তিটি নিঃসন্দেহে নিয়োগ প্রত্যাশীদের জন্য একটা খুশির খবর হল, করোনা কালীন সংকট মুহুর্তে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা যখন বিপর্যস্ত, নিয়োগ প্রত্যাশীরা যখন তাদের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত। ঠিক এমন মুহুর্তে এই বিশাল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি (৩২৫৭৭ জন, তবে সংখ্যাটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত নয়) তাদের মনে উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটির কয়েকটা ভালো দিক হলোঃ

১. শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ স্নাতক (৩ বছরের ডিগ্রি) / সম্মান (৪ বছরের অনার্স)/ সমমান (ফাজিল, যেকোনো বিষয়ে সমমান টেকনিক্যাল ডিগ্রি বা বিদেশ থেকে প্রাপ্ত সমমান ডিগ্রি)। এর ফলে পদটির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার (মহিলাদের জন্য এইচএসসি/সমমান) যে সমালোচনা ছিল তার অবসান হলো, এতে করে প্রকৃত শিক্ষাগত যোগ্যতার দাবি প্রতিষ্ঠিত হলো। যার ফলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার মানের উন্নয়ন হবে।

২. প্রার্থীর সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ বয়স সীমাঃ

করোনা কালীন সময়ে দেশে বড় কোনো সরকারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায় নি, এতে করে হাজার হাজার চাকরি প্রত্যাশিতদের ৩০ পেরিয়ে যায় এবং অনেকের বয়স ঝুঁকিতে ছিল। ফলে অনেকে আতঙ্কে ছিলেন যে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ধরতে পারবেন কিনা। তবে প্রার্থীর বয়স সীমা ২৫/০৩/২০২০ তারিখে সর্বোচ্চ ৩০ রাখায় এই সমস্যা থেকে তাদের রেহায় মিলেছে।

৩. এক বিজ্ঞপ্তিতেই রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী শিক্ষক (শূন্যপদ) এবং প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির সহকারী শিক্ষক(সৃষ্টপদ)- পদের আবেদনের সুযোগঃ

এর ফলে শিক্ষার্থীদের যেমন একদিকে আবেদন খরচ বাঁচবে ও অন্যদিকে প্রিপারেশন নিয়েও আলাদা দুঃচিন্তা থাকবে না। আবার অধিদপ্তরেরও পরীক্ষা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হ্রাস পাবে এবং অল্পসময়ে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে।

READ MORE  ভারতের রাজ পরিবারের একটি অসাধারণ গল্প

৪. বেতনস্কেলঃ বেতনস্কেল গ্রেড-১৩(১১০০০-২৬৫৯০) হওয়ায় চূড়ান্ত নিয়োগকৃতরা মানসম্মত হারে বেতন পাবেন।

বিজ্ঞপ্তির কিছু অস্পষ্টতাঃ

১. গ্রেড-১৩ হওয়ার পরও বিভিন্ন কোটা বিদ্যমান থাকা। সরকারি একটি ঘোষণার মাধ্যমে গ্রেড-১৩ থেকে কোনো কোটা না থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এতে কোটার বিষয়টি লক্ষণীয়। তবে শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটাটা কিছুটা গ্রহণযোগ্য হলেও অন্যান্য কোটা থাকাটা এখানে হতাশাজনক।

২. মহিলা কোটা অনুসৃত হবে কিনা?

পূর্বে প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ৬০% নারী কোটা বিদ্যমান ছিল এবারও এটা অনুসৃত হবে কি না তার কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই

৩. পূর্বে আলোচনায় উঠে আশা বিজ্ঞান কোটা অনুসৃত হবে কিনা?
প্রাথমিকে বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ২০% চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার কথা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই পূর্বে আলোচলায় উঠে এসেছিল। তবে বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই।

৩. লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে?
পূর্বে বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে এসেছিল যে লিখিত পরীক্ষা এমসিকিউ(MCQ) পদ্ধতিতে না হয়ে এককথায় উত্তর ও সংক্ষিপ্ত বিবরণ আকারে হতে পারে বা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের পদটির পরীক্ষাও ৩ ধাপে হবে যথা- এক- এম.সি.কিউ, দুই- লিখিত, তিন- ভাইভা। কিন্তু বিষয়টির কোনো স্পষ্ট বিবরণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয় নি।
যাহোক আমি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই যেন দ্রুত অস্পষ্ট বিষয়গুলোর যৌক্তিক দিকনির্দেশনা আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেন। অনানুষ্ঠানিক বিবৃতি শিক্ষিত ও সচেতন শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না। তাই নির্দেশনাগুলো পরিপত্র আকারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা বাঞ্ছনীয়।
এরই মধ্যে আমরা জানাতে পারছি যে ছাত্র অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে কোটার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবার সম্ভাবনা থাকে, তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত অস্পষ্ট বিষয়গুলো ব্যাপারে দ্রুত আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানানো।

READ MORE  যে কারণে প্রাগশি সিনিয়র সচিবের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ চায় শিক্ষকরা

এতঃপর ২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধানঃ

১. সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণঃ সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বয়স নিয়ে অনেকের মুখে একটা প্রশ্ন শোনা যায় যে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত বয়সসীমায় তার বয়স ২১-৩০ এর মধ্যে কিনা?

সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণঃ ১. কমপক্ষে ২০/১০/১৯৯৯ তারিখ বা তার আগে যাদের জন্ম তারা আবেদনের যোগ্য হবেন। অর্থাৎ ২১/১০/১৯৯৯ তারিখ বা তার পরে যাদের জন্ম তারা আবেদনে যোগ্য নন।

সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণঃ ২৫/০৩/১৯৯০ তারিখ বা তারপরে যাদের জন্ম তারা আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ ২৪/০৩/১৯৯০ তারিখ বা তার আগে যাদের জন্ম তারা আবেদনের যোগ্য নন।

২. বিবাহিত মহিলারা আবেদনে স্বামীর ঠিকানা নাকি বাবার ঠিকানায় পরীক্ষায় অংশ নিবেন, আর এক্ষেত্রে কিভাবে ফরম পূরণ করবেন?

জানুয়ারির আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই

বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, মহিলারা স্বামী বা বাবার যে কোনো একটি ঠিকানায় আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যে ঠিকানার (উপজেলার) প্রার্থী হতে ইচ্ছুক সেখানকার ঠিকানা -স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে দিবেন। এক্ষেত্রে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা যা-ই হোক। আপনি প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলে ভাইভাতে আপনি যে ঠিকানার স্থায়ী বাসিন্দা সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেয়রের প্রত্যয়ণপত্র সাথে নিবেন। আর চূড়ান্ত ভেরিফিকেশনে এসে আপনার স্থায়ী বসবাসের সত্যতা পেলেই কোনো সমস্যা নেই। আর বর্তমান ঠিকানা আপনি বর্তমানে যেখানে বাস করেন সেটা দিতে পারেন। বর্তমান ঠিকানার সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কারো মনে তবু সংশয় বা ভয় থাকলে আপনি যে ঠিকানায় পরীক্ষায় অংশ নিতে চান, স্থায়ী ও বর্তমান দুই জায়গায় একই ঠিকানা উল্লেখ করতে পারেন।

তবে আবার বলে রাখছি, মহিলাদের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্রের ঠিকানা মৌলিক কোন সমস্যা নয়, তাই আবেদনে ঐ ঠিকানা উল্লেখ না করলেও সমস্যা নেই।

সর্বোপরি, সকল নিয়োগ প্রত্যাশীদের প্রতি আহ্বান হল, সবাই নিজ নিজ মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহন করুন, নিজেদের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি আপনার ও আপনার পরিবারের সুন্দর ভবিষ্যতে আপনার প্রচেষ্টায় যেন কোন কিছু বাধা না হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন এবং শ্রেষ্ঠ পেশায় নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে সুশিক্ষিত জাতি গঠনের অংশীদার হবার সাধনা করুন।

READ MORE  এবারও সরকারি চাকুরীর আবেদনে বয়সের ছাড়

পরিশেষে, বহুল প্রতীক্ষিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, বিভাগ, প্রতিষ্ঠান এবং বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারকে সকল নিয়োগ প্রত্যাশীদের পক্ষথেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং এর মাধ্যমে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

-মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক, নিয়োগ প্রত্যাশী, মাস্টার্স ইন ম্যানেজমেন্ট, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া, বিএড- বাউবি, শিক্ষাবর্ষ-২০১৮-১৯, জেলা, জয়পুরহাট।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২ দিন ছুটিতে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি যেহেতু আছে

ডিবি আর আর।

Follow Our Twitter: CLICK HARE



Join telegram Channel : CLICK HARE

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *