শিক্ষকদের EFT নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর : নিজেই পুরণ করতে পারবেন

বেতন

দৈনিক বিদ্যালয় : EFT বা ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতি শিক্ষক দের জিটুপি বা গভর্নমেন্ট টু পারসনকে বেতন দেওয়া হবে। এই পদ্ধতিতে সরাসরি বেতন আসবে চাকুরীজীবীর ব্যাংক একাউন্টে।

ইএফটি সম্পর্কিত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি, যাতে আপনি নিজেই ইএফটি ফরম পূরণ করতে পারেন।

১# নতুন ইএফটি ফরমে পাতা আছে মোড় চারটি। সবকটি পাতাই পূরণ করতে হবে। ইএফটি ফরমে তিনটি সার্ভার থেকে কিছু তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে (অটো) চলে আসবে। যেগুলো হলোঃ

ক. এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) সার্ভার থেকে।
খ. পে-ফিক্সেশন সার্ভার থেকে।
গ. বাংলাদেশ ব্যাংক সার্ভার থেকে।

বিশেষ করে ব্যক্তিগত তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, বেতনের অংশ এবং ব্যাংক হিসাব নম্বরের বিপরীতে কিছু তথ্য উক্ত তিনটি সার্ভার থেকে আসবে। সেজন্য এই চারটি অংশ কোনভাবেই ভুল পূরণ করা যাবে না।

২# পুরো ফর্মের ৬ টি জায়গায় বাংলায় নাম লিখতে হবে। বাকি সবগুলো ইংরেজিতে লেখাই উত্তম হবে। এতে করে ডাটা এন্ট্রি যারা করবেন তাদের জন্য সুবিধা হবে। ইংরেজিতে নাম লেখার সময় সব অক্ষর Capital Letter ব্যবহার করাই ভালো।

ফরমের যে সমস্ত জায়গায় বাংলায় নাম লিখতে হবেঃ

ক. ১.০ প্রাথমিক তথ্যাদির * কর্মচারীর নাম লেখার ক্ষেত্রে।
খ. ২.২ পারিবারিক তথ্যাদির ২.২.১ এ স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কিত তথ্যাদির ৩ নম্বর কলামে।
গ. ২.২.২ এর সন্তান সম্পর্কিত তথ্যাদির ৫ নম্বর কলামে। (অবশ্যই যাদের প্রয়োজন তারা শুধুমাত্র লিখবেন)।
ঘ. ২.২.৩ প্রতিবন্ধি সন্তান সম্পর্কিত তথ্যাদির ৪ নম্বর কলামে (যাদের প্রয়োজন শুধু তারা লিখবেন)।
ঙ. ৫.২ জিপিএফ (সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল) নমিনি সংক্রান্ত তথ্যাদির ৪ নম্বর কলামে।
চ. ৯.০ চাকুরিজীবির অবর্তমানে পেনশন প্রাপ্তির উত্তরাধিকারী মনোনয়ন অংশের ৪ নম্বর কলামে বাংলায় লিখতে হবে।

৩# ১.০ প্রাথমিক তথ্যাদির জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) নম্বরের ক্ষেত্রে পে-ফিক্সেশনে ব্যবহৃত নম্বরটি দিতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন আইডি কিংবা পুরাতন আইডি ধরা যাবে না। কারণ পুরাতন আইডিতে ডিজিট আছে ১৭টি। নতুন আইডি কিংবা স্মার্ট কার্ডে ডিজিট আছে ১০টি। এ বছরের পে-ফিক্সেশনের কপি নিয়ে দেখতে হবে কোন আইডি নম্বর ব্যবহৃত হয়েছে। যে আইডি নম্বর ব্যবহৃত হয়েছে সেটাই দিতে হবে। কারণ আইডি নম্বরের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু তথ্য EFT টিতে চলে আসবে।

৪# ১.০ প্রাথমিক তথ্যাদির সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের ধরন অংশে চারটি অপশন আছে। যে যে অপশনে নিয়োগ সে সেখানে টিক চিহ্ন দিবেন। প্রয়োজনে কোন এক্সপার্ট বা উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহায়তা নিতে পারেন।

READ MORE  প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১০ম গ্রেড প্রাপ্তির সুখবর

৫# ২.০ ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও ব্যাংক একাউন্ট সংক্রান্ত তথ্যাদির ২.১ এ মোবাইল ফোন নম্বর অংশে পে-ফিক্সেশনের নম্বর দিতে হবে এমন কোন কথা ট্রেনিং এ বলে নাই। কারণ সফটওয়ারে মোবাইল নম্বরটি টাইপ করে দিতে হবে। মূলত মোবাইল নম্বর চাওয়া হচ্ছে ব্যাংক হিসেবে সরাসরি অর্থ প্রেরণের তথ্য SMS এর মাধ্যমে জানানোর জন্য মোবাইল নম্বর প্রয়োজন; এটাই প্রথম পৃষ্ঠার শেষে উল্লেখ আছে। কেননা, এই মোবাইল নম্বরে ব্যাংক হিসেবের তথ্য আসবে। তবে পে-ফিক্সেশনের মোবাইল নম্বরও দেওয়া যাবে।

৬# ২.২.২ সন্তান সম্পর্কিত তথ্যে সব সন্তানের তথ্য দিতে হবে। কিন্তু শিক্ষা ভাতা পাবে মাত্র দুই জন। সন্তানের বয়স ৫ থেকে ২৩ বছর পর্যন্ত। তবে সন্তান বিবাহিত হলে সে শিক্ষাভাতার যোগ্য নয়। সন্তানের তথ্য না দিলে সে শিক্ষাভাতা পাবে না। কারণ সন্তানের শিক্ষাভাতা ফিক্সেশনের সাথে জড়িত। এন্ট্রির সময় পে-ফিক্সেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা আসবে। তথ্য না থাকলে বেতন অংশে শিক্ষাভাতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসবে না।

৭# ১.৩ ব্যাংক হিসাব তথ্য অংশে ব্যাংক হিসেবের নাম যেভাবে আছে সেভাবেই লিখতে হবে। কোনক্রমেই এনআইডি কিংবা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী লেখা যাবে না। কারণ এই অংশটির তথ্য বাংলাদেশের সার্ভারে রক্ষিত। তাই ব্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত নাম না দিয়ে এনআইডি কিংবা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী নাম দিলে ইএফটি ফেরত আসবে। ধরা যাক, কোন ব্যক্তির NID কিংবা শিক্ষা সনদে নাম আসে আমিরুল ইসলাম আমির। কিন্তু ব্যাংক হিসেবে আছে আমিরুল ইসলাম। এক্ষেত্রে এনআইডি কিংবা শিক্ষা সনদে থাকা আমিরুল ইসলাম আমির নামটি ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করলে বেতন আসবে না। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ব্যাংক হিসেবে নাম আছে আমিরুল ইসলাম। ব্যাংক হিসাবের ধরণে অবশ্যই সঞ্চয়ী বা Savings এ টিক চিহ্ন দিতে হবে।

রাউটিং নম্বরঃ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের নাম + Routing Numer লিখে গুগলে সার্চ দিলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের রাউটিং নম্বর পাওয়া যাবে। যথা, Sonali Bank Routing Number লিখে সার্চ দিলে সমগ্র বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার রাউটিং নম্বর পাওয়া যাবে। সেখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যাংক শাখার রাউটিং নম্বরটি নিতে হবে। অথবা Bank এর চেক বইয়ের পাতায় কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকেও রাউটিং নম্বর জেনে নেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ব্যাংকের রাউটিং নম্বর কোনভাবে ভুল করা যাবে না।

READ MORE  প্রাথমিক শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রাগশি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন

৮# ৩.০ চাকরি সম্পর্কিত তথ্যাদির বর্তমান শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে টিক চিহ্ন দিতে হবে।

৯# ৩.৩ প্রথম যোগদানঃ এখানে প্রথম যোগদানকৃত বিদ্যালয়ের নাম লিখতে হবে এবং ঐ সময় বেতন গ্রেড ও স্কেল কত ছিল তা লিখতে হবে। যা শিক্ষা অফিস থেকে জেনে নেওয়া ভালো।

১০# পদোন্নতি/উচ্চতর স্কেলের তথ্যাদিতে সিইনএড/ডিপিএড/বিএড করলে তা উচ্চতর স্কেল হিসেবে গণ্য হবে এবং সে তথ্য দিতে হবে। সিলেকশন গ্রেড , উন্নীত গ্রেড, টাইম স্কেলও এখানে আসবে। পদোন্নতি পেয়ে থাকলে সে তথ্যও দিতে হবে।

১১# ৪.০ বেতন ভাতাদির ও কর্তন সম্পর্কিত তথ্যাদি সতর্কতার সাথে পূরণ করতে হবে। কারণ এখানকার তথ্য পে-ফিক্সেশন থেকে আসবে। যদি এন্ট্রির সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই অংশের তথ্য না আসে তবে পে-ফিক্সেশনে ভুল থাকতে পারে। যা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে সংশোধন করে নিতে হবে। সন্তানের তথ্য এন্ট্রি না দিলে এই অংশে শিক্ষাভাতা শূন্য দেখাবে। সেক্ষেত্রে ২.২.২ এ সন্তানের তথ্য অবশ্যই দিতে হবে।

১২# ৪.২ কর্তনসমূহ থেকে যাদের জন্য প্রযোজ্য তারাই দিবেন। কল্যাণ কর্তন দেওয়ার দরকার নাই। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কেটে নিবে। কল্যাণ কর্তন ফরমে উল্লেখও নাই।

১৩# ৫.১ সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (GPF) যাদের তহবিল খোলা আছে তারা তথ্য দিবেন। তথ্য নিজের কাছে না থাকলে হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন। যাদের নাই তারা ‘NO’ লিখবেন। এন্ট্রির সময় নির্দিষ্ট টাকার পরিমাণ বসিয়ে ‘NO’ সিলেক্ট করে দিতে হবে। এক্ষেত্রেও শিক্ষা অফিসের পরামর্শ নেওয়াই উত্তম।

১৪# ৫.৩ চলমান জিপিএফ অগ্রিমঃ যারা জিপিএফ থেকে লোন নিয়েছেন তারা তথ্য অবশ্যই দিবেন। যারা নেন নাই তারা N/A লিখবেন। এখানে সর্তকতার সাথে কাজ করতে হবে। কারণ লোন নিলে কিস্তি ম্যানুয়ালি অন অফ করা যায়। কিন্তু EFT তে সে সুযোগ থাকবে না। ধরা যাক, কেউ যদি ৬০ কিস্তির জন্য লোন নেয় এবং ৪০ কিস্তি পরিশোধ করে 5 মাস কিস্তি অফ রাখে। তবে পরের ২০ কিস্তির জন্য পরের মাস থেকে হিসেব ধরে ২০ কিস্তি সিলেক্ট করে দিতে হবে। নতুবা কিস্তি শুরুর তারিখ উল্লেখ করলে অটো কাটতেই থাকবে। কারণ সফটওয়ার বুঝতে পারবে না আগে কিস্তি দেওয়া হয়েছে কি না।

১৫# ৬.০ বর্তমান ঋণ সংক্রান্ত তথ্যাদিঃ
এখানে ৫ (পাঁচ)টি ঘর দেওয়া আছে- গৃহনির্মাণ ঋণ, কম্পিউটার ঋণ, মোটর সাইকেল ঋণ, মোটরকারণ ঋণ এবং বাইকেল ঋণ। এগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে (যে ব্যাংকে বেতন নেওয়া হয়) ঋণ নিলে তার তথ্য দিতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে কনজুমার/ পার্সনাল ঋণ নিলে তা এখানে আসবে কিনা সে সম্পর্কে জানতে শিক্ষা অফিসের দ্বারস্থ হওয়াই উত্তম। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংক বা সংস্থা থেকে ঋণ নিলে তার তথ্য এখানে আসবে না।

READ MORE  কর্মচারী, কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য : কারোর বেড়েছে ৪২৫০ কারোর ৬২ হাজার

১৬# ৭.০ গৃহীত অর্জিত ছুটি/লিয়েন সম্পর্কিত তথ্যাদিঃ ৭.১ অনুমোদিত ছুটিঃ এখানে অর্জিত, প্রসূতি, অধ্যয়ন ছুটি এবং ছুটির উদ্দেশ্য- হজে গমন, বহিঃবাংলাদেশ গমন, শ্রান্তি বিনোদন ইত্যাদি উল্লেখ করতে হবে। সার্ভিস বুকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাবেন। মাতৃত্ব ছুটির সাথে অনেকের সন্তানের জন্মনিব্ধনের বয়স মিল না থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সমাধানের জন্য শিক্ষা অফিসের দ্বারস্থ হওয়াই উত্তম। ৭.২ লিয়েন কারো থাকলে দিবেন না থাকলে N/A লিখতে হবে।

১৭# ৪.০ শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা (যদি থাকে):
কারো থাকলে দিতে হবে। যা সার্ভিস বুকে আছে।

১৮# ৯.০ চাকুরীজীবির অবর্তমানে পেনশন প্রাপ্তির উত্তরাধিকারী মনোনয়নঃ নিয়ম অনুসারে স্বামী/স্ত্রীর নাম আসবে। কিন্তু অন্য কাউকে দিতে চাইলে তার শতকরা হার নির্ধারণ করে দিতে হবে। যতজনকে দিবেন ততজনকেই অংশ শতকরা হারে উল্লেখ করতে হবে।

বিশেষভাবে উল্লেখ যে, ফরম স্পষ্ট অক্ষরে লেখার চেষ্টা করতে হবে। অস্পষ্ট ও হাতের লেখা বুঝা না গেলে এন্ট্রি দিতে সমস্যা হতে পারে। তবে EFT ফরম পূরণ করা নিয়ে ভয় পাবার কিছু নাই। কারণ তথ্য এন্ট্রির পর প্রত্যেককেই তার প্রুভ কপি দেওয়া হবে। প্রুভ কপিতে তথ্য ঠিক থাকলে তবেই তা Approve হবে। কোন ভুল থাকলে পরে তা পরিবর্তন করা যাবে। তবে ব্যক্তিগত তথ্য, জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর, ব্যাংক হিসেব এবং বেতনের অংশের তথ্য যেন ভুল না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। নতুবা EFT এন্ট্রি হলেও উপর্যুক্ত তথ্যের ভুলের কারণে বেতন না এসে উল্টো EFT ফেরত আসতে পারে।

ফরম পূরণ করে শিক্ষা অফিসে জমা দিতে হবে। এন্ট্রি করবে শিক্ষা অফিস। শিক্ষক নিজে নিজে এন্ট্রি করতে পারবে না। মনে রাখা দরকার যে, গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কখনই ওপেন হয় না।

(শিক্ষক তাপস কর্মকার এর টাইমলাইন থেকে)

dainikbidyaloy.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *