সরকারী চাকুরীজীবীদের পেনশন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রায় হাইকোর্টের

দৈনিক বিদ্যালয় ডেস্ক :: সেচ্ছায় কেউ চাকুরী ছেড়ে দিলে পেনশন সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিদাদি পাবেন কী, পাবেন না? এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে হাইকোর্ট।

এই প্রশ্নের উত্তরে সরকারি চাকরি বিধিমালার ৩০০ নম্বর বিধিকে অসাংবিধানিক এবং অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। যার ফলে এখন থেকে কেউ সরকারি চাকরি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলে চাকিরর মেয়াদ অনুযায়ী পেনশনসহ চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং বিচারপতি কাজী জিনাত হকের ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৫ মার্চ, বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। যে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী মো. মাহবুব মোরশেদ নিজেই এবং সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।

এই আদেশের বিষয়ে সরকার পক্ষের আইন কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিলে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস বিধি ৩০০ মোতাবেক চাকরি ‘বাজেয়াপ্ত’ বলে গণ্য হওয়ায় সরকারি চাকরিজীবী পেনশন সুবিধা পেতেন না। উক্ত বিধিতে উল্লেখিত ‘পদত্যাগ করলে চাকরি বাজেয়াপ্ত বলে গণ্য হবে’ এই অংশটুকুকে মহামান্য হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন।

এবিষয়ে পিটিশনকারী অ্যাডভোকেট মাহবুব মোরশেদ জানান, সরকারি চাকরি থেকে ‘পদত্যাগ’ করলে চাকরি বাজেয়াপ্ত হবে বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের বিধি-৩০০ অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। যে রায় ঘোষণার ফলে কোনো সরকারি চাকরিজীবী যদি স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন তাহলে তার চাকরি ‘বাজেয়াপ্ত’ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পিটিশনকারী ও বিচারক মাহবুব মোরশেদ সহকারী জজ হিসেবে ১৯৯১ সালের ১১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন। এরপর ২০১১ সালে স্বেচ্ছায় বিচারকের চাকুরী স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেন। সে সময় সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সেই বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে তার পদত্যাগপত্রটি কার্যকর হয়। এরপর এককালীন পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা মঞ্জুরের জন্য মাহবুব মোরশেদ আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়েছে জানিয়ে মাহবুব মোরশেদ যাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে এককালীন আনুতোষিক পেতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৫ সালে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে চিঠি দেন।

READ MORE  শিক্ষক ও সরকারী কর্মচারীদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতার সকল খুটিনাটি

এর পরিপ্রেক্ষিতে সেই বছরের ২৫ মার্চ তারিখে প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মাহবুব মোরশেদের পেনশন সংক্রান্ত কেসটি ফেরত দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে চিঠি পাঠান। এরপর মাহবুব মোরশেদের পেনশন সুবিধা আটকে যায়। যে চিঠিতে বলা হয়, সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করলে আগের চাকুরী কাল বাজেয়াপ্ত করা হবে। অর্থাৎ পেনশন গ্রহনের জন্য গণনাযোগ্য হবে না।

আলোচ্য ক্ষেত্রে পেনশনারের চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়নি এবং তিনি ২৫ বছর পূর্তি সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট বিধানের আলোকে পেনশনের জন্য কোনো আবেদন করেননি বলে পেনশনপ্রাপ্ত নন। যা ১৯৭৪ সালের গণকর্মচারী অবসর আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী।

এমতাবস্থায় বিধি- ৩০০ ও সেই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মাহবুব মোরশেদ ২০১৬ সালে রিট করেন। যার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ৮ মে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। যে রুলে বিএসআর ৩০০ বিধি কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না এবং সেই চিঠি কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভুত ঘোষণা করা হবে না; এই মর্মে কারণ জানতে চাওয়া হয়। যে রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে উপরোক্ত “কেউ সরকারি চাকরি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলে চাকিরর মেয়াদ অনুযায়ী পেনশনসহ চাকরির অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন” এই আদেশ দেন হাইকোর্ট।

তিনি আরো বলেন, পেনশন পাওয়া, না পাওয়া সংক্রান্ত বাংলাদেশ সার্ভিস রুলসের বিধি ৩০০ অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট এবং এই রায়ের ফলে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় কোন সরকারি চাকরিজীবী পদত্যাগ করলে চাকরির মেয়াদ অনুযায়ী পেনশন সহ চাকুরীর অন্যান্য সকল সুবিধা পাবেন সেই কর্মকর্তা বা কর্মচারী।

ডিবি আর আর।

Leave a Comment