শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড নিয়ে বাণিজ্য চলছে

বেতন

ডিবি ডেস্ক :: দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়ন করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ২৬ এপ্রিল এক পরিপত্রের মাধ্যমে নির্দেশ জারি করে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিনা ব্যার্থতায় ১০ মের মধ্যে দেশের সব জেলা উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের এ বেতনগ্রেড বাস্তবায়ন করতে বলে।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মু্হাম্মদ মুনসুরুল আলমের স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্যেও একাধিক উপজেলায় এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি। এটি নিয়ে চলছে বাণিজ্য। একাধিক উপজেলার শিক্ষকরা এটি নিয়ে শিক্ষা অফিসের অনৈতিক দাবি করার অভিযোগ তুলেছে। যে কারণে বিলম্বিত হচ্ছে সে সকল উপজেলার ১৩ তম গ্রেড বাস্তবায়ন।

এবিষয়ে দরকষাকষি না করতে পারায় অনেক উপজেলায় ১০ তারিখের মধ্যে ১৩তম গ্রেডে ফিক্সেশন সম্ভব নয় বলে বিজ্ঞপ্তি ও জারি করেছে একাউন্স অফিস। যেমন পাটগ্রাম উপজেলা লালমনিরহাট।

সে সকল উপজেলার শিক্ষকদের সাথে কথা বললে, তারা এই বিলম্বের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের অনৈতিক কিছু দাবি ও একাউন্স অফিসকে বিশেষ কারণে গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের কয়েকজন নেতা ও ভুক্তভোগী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় ১৩তম গ্রেড নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা বিশেষ কিছু দাবি করেছেন। যা নিয়ে শিক্ষকদের পূর্বেই অভিযোগ এমন; আমাদের যখনই টাইমস্কেল বা উচ্চতর গ্রেড বা বেতন বৃদ্ধি মূলক কিছু করা হয়, তখনই উপজেলা শিক্ষা অফিস একাউন্স অফিসে কিছু দিতে হয়; এমন অযুহাতে তারা কিছু অন্যায্য দাবি করে থাকে। এবারও অধিদপ্তরের এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা থাকা সত্যেও বিলম্বিত হচ্ছে শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড।

এই অন্যায্য দাবির বিষয়ে নোয়াখালীর কবিরহাট, ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অভিযোগ হল, ১৩তম গ্রেডে ফিক্সেশন করার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ৪০০-৫০০ টাকা করে চেয়েছেন তাদের কাছে। জানাগেছে এসব উপজেলায় শিক্ষকরা টাকার পরিমাণ কমাতে চাইলে তাতে কোনো কাজ হয়নি। সেজন্য এসব উপজেলায় এখনো ১৩তম গ্রেডের কাজ ঝুলে আছে।

READ MORE  প্রাথমিক শিক্ষকদের ২১-২২ অর্থ বছরে বেতন, ভাতা ১৩ হাজার ৬৬৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা মঞ্জুরি প্রদান

এবিষয়ে একটি অনলাইন পোর্টাল জানতে চাইলে ফরিদপুর বোয়ালমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

উপরোক্ত উপজেলার শিক্ষা অফিসারকএ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১০ তারিখ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার পরেও কেন এখনো এই নির্দেশনার বাস্তববায়ন হয়নি একজন সাংবাদিক জানতে চাইলেও এর কোন সদুত্তর উক্ত শিক্ষা অফিসার দিতে পারেন নি।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

এবিষয়ে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবর রহমান এই অনৈতিক অর্থ চাওয়ার অভিযোগ মূলক শিক্ষকদের কিছু ম্যাসেঞ্জারের আলাপন শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এছাড়া কেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ‘দৈনিক বিদ্যালয়’ শিক্ষা বিষয়ক অনলাইন পোর্টালকে বলেন, ”শিক্ষক নামধারী দালাল শিক্ষক টাকা তোলার মি‌ডিয়া হিসেবে কাজ করেন। ত‌ারা টাকা নিজের পকেটে ‌যেমন রাখেন তেম‌নি অ‌ফিসার‌দের তুষ্ট করেন যা শিক্ষক হিসেবে এমন কাজ খুবই গ‌র্হিত।”

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) খালিদ আহম্মেদ বলেছেন, “এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কড়া কোনো নির্দেশনা দেয়া যায় কি না অথবা কৌশলগত ভাবে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টাও চলছে।”

উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এক পরিপত্রে ১০ মে তারিখের মধ্যে ১৩ গ্রেডের ফিক্সেশন করার কথা থাকলেও অনেক উপজেলা এটিকে আমলে নেননি। যে কারণে ভোগান্তিতে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

-ডিবি আর আর।

আরও পড়ুন : কর্মচারী, কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য : কারোর বেড়েছে ৪২৫০ কারোর ৬২ হাজার

মাধ্যমিকের ক্লাস হচ্ছে কিনা অনলাইনে মনিটরিংয়ের নির্দেশ

উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের মোবাইলে : চার্জ লাগবে না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *