প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেডেশন ও পদোন্নতি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত

নিজস্ব প্রতিবেদক :: অনেক দিন ধরে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় হতাশা বিরাজ করছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে। সর্বশেষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। কিন্তু এক্ষেত্রে ও দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। সেই জটিলতা নিরসনে বিপাকে এখন অধিদপ্তর।

এসময়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলোতে শিক্ষকদের গ্রেডেশনের লিস্ট সার্ভারে আপলোড করা হচ্ছে। এই আপলোডের পরে দেখা যাচ্ছে তথ্য অন্তর্ভুক্ত করলে অন্য উপজেলা থেকে বদলি হয়ে আসা শিক্ষকদের অবস্থান তালিকার সর্বশেষে দেখাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সার্ভারের ভাষ্য অনুযায়ী এরা বহিরাগত শিক্ষক। যারা অন্য উপজেলা থেকে বদলী হয়ে এসেছে। সেই শিক্ষকদের সিনিয়রিটি ঠিকভাবে নিরূপণ করলে উপজেলায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে। যার ফলে পদোন্নতি নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন শিক্ষকদের পদোন্নতি নিয়ে মহা বিপাকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এই পরিস্থিতিতে কী করণীয় তা জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম।

এবিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রেডেশন তথ্য এন্ট্রির কাজ চলছে। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা শিক্ষকদের এই তথ্য সার্ভারে এন্ট্রি করছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেডেশন তালিকা তৈরি হচ্ছে। তবে এই গ্রেডেশন তালিকা নিয়েই দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন শিক্ষকরা।  

অন্য উপজেলা থেকে বদলী হয়ে আসা শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গ্রেডেশন তালিকায় তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফটওয়্যার গ্রেডেশন তালিকা করছে। যাতে দেখা যাচ্ছে বাইরে থেকে বদলি হয়ে আসা শিক্ষকদের অবস্থান গ্রেডেশন তালিকায় সবার শেষে অবস্থান করছেন। ফলে বদলি হয়ে আসা শিক্ষকরা পদোন্নতি নিয়ে বিপাকে পড়ছেন।

অন্যদিকে, সাধারণ শিক্ষকরা বলছেন, নিয়োগ যেহেতু উপজেলা ভিত্তিক সেহেতু অন্য উপজেলা থেকে বদলী হয়ে আসলে তাদের পিছিয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। এ নিয়ে এখন প্রাথমিক শিক্ষকদের আলোচনা সমালোচনা তুঙ্গে।

READ MORE  ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বললেন '৩৩৩' এ ফোন দিতে

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে ব্যাখ্যা হল, দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। আর অন্য সরকারি কর্মচারীদের মত শিক্ষকরা বদলি হতে পারেন। আর পদোন্নতির ক্ষেত্রে উপজেলার সিনিয়র শিক্ষকদের একটি অংশ পদোন্নতি যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। পদোন্নতি পেয়ে বাইরে থেকে আসা শিক্ষকরা সিনিয়র হওয়ায় তারা উপজেলায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের পদোন্নতির কোটা পূরণ করে ফেলছেন। সে জটিলতা নিরসনের জন্যই গ্রেডেশন সফটওয়্যারে বহিরাগত শিক্ষকদের পেছনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। সবশেষে বিষয়টিকে উভয় সংকট বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্তা ব্যাক্তিরা।

অন্যদিকে বলা হচ্ছে, চাকরিজীবী হিসেবে বদলি শিক্ষকদের সাংবিধানিক অধিকার। সকল নীতিমালা মেনেই তারা বদলি হয়েছে। এছাড়া বদলীর সময় বলা হয়নি আপনি বদলী হলে পদোন্নতিতে পিছিয়ে যাবেন। এছাড়া অনেক বদলী হয়ে আসা বহিরাগত সহকারী শিক্ষক এখন চলতি দায়িত্বে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। জেষ্ঠ্যতার তালিকায় তাদের পিছিয়ে রাখা তাদের জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু ও বটে।

এবিষয়ে প্রাথমিকের উপজেলায় নিয়োগ পাওয়া সিনিয়র শিক্ষকরা দাবি করে বলছেন, উপজেলার বাইরে থেকে বদলি হয়ে এসে শিক্ষকরা পদোন্নতির কোটা পূরণ করে ফেলেছেন। তাদের যদি গ্রেডেশন তালিকায় উপরে স্থান দেয়া হয় সেক্ষেত্রে উপজেলায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা বিপাকে পরবেন। তাদের জন্য নির্ধারিত কোটা পূরণ হয়ে যাবে। স্থানীয় শিক্ষকরা পদোন্নতি পাবেন না। যেকারণে জেলা সদর বা মেট্রোপলিটন এলাকায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা পদোন্নতিতে পিছিয়ে যাবেন।

এ নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ভাষ্য হল, পদোন্নতির নিয়ে আমরা উভয় সংকটে পড়েছি। প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য গ্রেডেশন করতে আমরা একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করেছিলাম। সেই সফটওয়্যারটিতে বদলি হয়ে আসা শিক্ষকদের তথ্য এন্ট্রি করার পরে তাদের অবস্থান সবার শেষে দেখাচ্ছে। যে কারণে বদলি হয়ে আসা শিক্ষকরা বলছেন তারা পদোন্নতি পাবেন না। অন্যদিকে বদলি হয়ে আসা শিক্ষকদের সিনিয়রিটি নির্ধারণ করা হলে তারা উপজেলায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের সামনে চলে আসছেন। যেহেতু নিয়োগ উপজেলাভিত্তিক হয় তাই জেলার সদর উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকায় নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা পদোন্নতির সুযোগ হারাবেন। এর কারণ বদলি হয়ে আসা শিক্ষকরা কোটা পূরণ করে ফেলবেন। যদিও বদলি হয়ে আসা শিক্ষক অন্য উপজেলায় নিয়োগ পেয়ে এখানে এসেছেন। এদিকে উপজেলার স্থানীয় শিক্ষকরা বছরের পর বছর পদোন্নতি বঞ্চিত থাকবেন।

READ MORE  শিক্ষকদের টাইমস্কেল বাস্তবায়ন ও কমিটি গঠন

মহাপরিচালক মনসুরুল আলম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা উভয় সংকটে পড়েছি। এই সার্বিক বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। তারা মতমত দিলে আশাকরি বিষয়টি সমাধানে আসবে। এছাড়া তিনি আরও বলেন, কোনো শিক্ষক যেন তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। বদলি ও পদোন্নতি চাকরিজীবীদের অধিকার। এটার সমাধান হবে।

নগদে যারা উপবৃত্তি বা জামা জুতার টাকা পায়নি : তাদের যা করতে হবে

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা ৬ মাসের উপবৃত্তির টাকা পাচ্ছে

৬০ হাজার ও পৌনে ৪ লাখ ভুয়া শিক্ষক : জাল সনদধারীরা এবার ধরা খাবে যেভাবে

শিক্ষকদের টাইমস্কেলে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে সরিয়ে নেওয়া হবে

উল্লেখ্য, এটির সুষ্ঠু সমাধান না হলে বিষয়টি আদালত পর্যায়ে গড়ালে অখন পদোন্নতি আরো দীর্ঘ সময়ের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে চিন্তাশীল শিক্ষকরা।

ডিবি আর আর।

Leave a Comment