প্রাথমিকের নিয়োগ বিধিমালায় শিক্ষকদের পদোন্নতির নামে শুভঙ্করের ফাঁকি

প্রাথমিক

বদরুল আলম :: গত ৯ জুলাই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেনের টুইট বার্তা থেকে জানতে পেলাম যে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা সচিব কমিটিতে অনুমোদিত হয়েছে। যা সাবেক সিনিয়র সচিব প্রস্তাবিত এবং তাঁর দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমের ফসল বলে উল্লেখ করেছেন। এই বিধিমালা অনুমোদন হওয়ায় সাবেক সিনিয়র সচিব ভীষণ খুশি ও এ কাজে যারা সহযোগীতা করেছেন তাদের সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরাও এবিষয়টি অভিনন্দন জানাই!

কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, নতুন নিয়োগ বিধিমালায় পদোন্নতির বিষয়ে কি লেখা আছে সেটাই আজকের আলোচ্য বিষয়?

গতকাল রাতেই আমি নতুন নিয়োগ বিধিমালাটির কিছু অংশ হাতে পেয়েছি এবং বিষয়টি পড়ে আশ্চর্য হয়েছি যে, এখানে প্রধান শিক্ষকদেরকে পদোন্নতির কোনই সুযোগ রাখা হয়নি। বিভাগীয় পদোন্নতির পরিবর্তে বিভাগীয় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে মাত্র তাও আবার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ। সে শর্তগুলো পূরণ করে পদোন্নতি পাওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়!

বিভাগীয় প্রার্থী হবার শর্ত গুলো হলোঃ

# সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদের ৮০% প্রধান শিক্ষকদের মধ্য থেকে নিযোগ দেওয়া হবে এবং বাকি ২০% বাইরে থেকে নিয়োগ প্রদান করা হবে।

# প্রধান শিক্ষকদের বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে।

# প্রধান শিক্ষক পদে কমপক্ষে তিন বছরের অভিঙ্গতা থাকতে হবে।

# বহিগতদের সাথে পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষাায় উত্তির্ন হয়ে আসতে হবে।

এই শর্তগুলো পূরণ করে প্রধান শিক্ষকগণ কোন অবস্থাতেই সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার হতে পাররেনা। কেননা আপনারা সবাই জানেন যে, এখন থেকে আর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবেনা। সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককের শুন্যপদ পুরণ করা হবে।

ধরে নিন, একজন সহকারী শিক্ষক ৩০ বছর বয়সে চাকুরিতে যোগদান করলো প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে এমনিতেই তার ১৫ থেকে ২০ বছর সময় লেগে যাবে। যে সকল উপজেলায় শিক্ষক সংখ্যা বেশি সেখানে পদোন্নতি পেতে আরোও বেশি সময় লেগে যাবে। তার মানে একজন সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে তার বয়স এমনিতেই ৪৫ বছর অতিক্রম করে যাবে। তার পর আবার প্রধান শিক্ষক পদে তিন বছরের চাকুরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, প্রধান শিক্ষকদের বয়স ৪৫ বছর অতিক্রম করার কারনে প্রধান শিক্ষকগণ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে বিভাগীয় প্রার্থীতা হবার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবেন।

READ MORE  দুর্নাম কুড়ানো সেই অফিসার এখন সুনামগঞ্জে

যদিও কালেভদ্রে দুই একজন প্রধান শিক্ষক বিভাগীয় প্রার্থী হওয়ার সুযোগ যদিও পান, তাদেরকে আবার বহিরাগতদের সাথে পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তির্ন হয়ে আসতে হবে। ঐ বয়সে একজন প্রধান শিক্ষককের পক্ষে কি বহিরাগতের সাথে প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় টিকে থাকা সম্ভব? কোন অবস্থাতেই তা সম্ভব নয়! এখানে প্রশ্ন হল, পরীক্ষাই যদি দিতে হয় তাহলে আমাদের অভিঙ্গতার মুল্য কোথায়?

সেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় পদোন্নতির শর্তে আরো উল্লেখ আছে যে, প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে থেকে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে, তা বাইরের প্রার্থীদের মধ্য থেকে তা পূরণ করা হবে। বিষয়টি আমার কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে, প্রধান শিক্ষকগণ যাতে কোন অবস্থাতেই পদোন্নতি না পাই তার একটা কুটকৌশল ও নীলনকশা মাত্র। এই কালো বিধিমালায়র বিরুদ্ধে শিক্ষকদেরকে এগিয় আসতে হবে ও প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং প্রচুর লেখা লেখি করতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলনের ডাক দিতে হবে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকদের পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা আমরা চলে যাবো এর সুফল আপনারাই ভোগ করবেন। সময় থাকতে এগুলো সংশোধন করতে না পরলে আপনারা (সহকারী শিক্ষকগণ) ভবিষতে এই সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। তাই আশুন আমরা সবাই মিলে নতুন বিধিমালার অসংগতি বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তুলি।

এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার নিয়োগ বিধিমালা সচিব কমিটিতে অনুমোদন হয়েছে বিষয়টি জানতে পেলাম। কিন্তু কী নিতিমালা অনুমোদন হলো তা আমরা কেউ জানতে ও বুঝতে পারছিনা! নিয়োগ বিধিমালা অনুমোদনের পূর্বে আমাদের উর্ধতন কতৃপক্ষের উচিৎ ছিলো তা শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সংশোধন করে নেওয়া। তাহলে শিক্ষকদের স্বার্থের পরিপন্থী কোন অসংগতি বিষয় থাকলে তা সংশোধন করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু বিষয়টি আমদের জানতে ও বুঝতে দেওয়া হয়নি। আমাদের উর্ধত্তন কতৃপক্ষ আমাদের সে সুযোগ দেননি যা সত্যিই দুঃখজনক।

READ MORE  একই বিদ্যালয়ে ৩ থেকে ৫ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না প্রাথমিক শিক্ষকরা

আরও পড়ুন : এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যে যে বিকল্প পদ্ধতি আসছে : ঘোষণা হবে যখন

সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পোষ্যরা ব্যবসা করতে পারবে না

সরকারি চাকরিজীবীদের যে বিষয়ে সতর্ক করল সরকার

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না ২ টি কারণে

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা শিক্ষক বান্ধব হলে আমরা তা স্বাগত জানাবো। কিন্তু নিয়োগ বিধিমালায় শিক্ষকদের স্বার্থের পরিপন্থী কোন বিষয় থাকলে আমরা তা মেনে নেব না। আমরা সবাই সম্মিলিত ভাবে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলবো।

ধন্যবাদান্তে, মোঃ বদরুল আলম, সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *