বিদ্যালয় রিপোর্ট :: শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে এখন একটাই শংকা, আবার কী করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার ছড়িয়ে পড়বে? আবার কী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে? আর যদি এই নতুন ধরনের বিস্তার রোধ না করা যায়, তবে কখন আঘাত হানতে পারে এদেশে? তাতে কী অভিভাবকদের সন্তানদের স্কুল-পাঠশালা আবার বন্ধ হবে? এমনই সব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে। আসুন এসকল প্রশের উত্তর খোঁজা যাক!
যদিও বাংলাদেশে অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার এখনো শুরু হয়নি। ১২ থেকে ৩০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন। ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে এই মুহূর্তে আবারও করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হার ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে। যার পেছনে রয়েছে ভাইরাসটির নতুন ধরন, যার নাম অমিক্রন। তবে ভয়ের বিষয় হল, দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত অমিক্রন শনাক্ত হয়েছে সাত জনের শরীরে। তবে দক্ষিন আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনের কাউকে ট্রেস করা যাচ্ছে না। তারা পালিয়ে আছে।
এখন প্রশ্ন হল, অমিক্রনের কারণে ২০২২ সালে কি বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে? আগামীতে কী ধরনের পরিস্থিতির পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে?
তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যেই অমিক্রনের সংক্রমণ বাড়বে?
এবিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর জানিয়েছেন, আগামী তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশেও অমিক্রনের সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা করে তিনি বলেন, এশিয়া অঞ্চলে এখনো ডেল্টা বেশি, তবে অমিক্রন ভেরিয়েন্ট সেটা সারপাস করে যাবে। তিনি আরও জানান, গত দুই বছর আমরা যেটা খেয়াল করেছি ইউরোপ আমেরিকায় ছড়ানোর তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে সেটি আমাদের এদিকে আসে।”
তার ভাষ্য মতে “ওসব দেশে অনেক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যে অসুখের ইনকিউবেশন পিরিয়ড থাকে; সেগুলো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ঠেকানো যায় না। এক্ষেত্রে আসাটা দেরি করানো যায় মাত্র। এরফলে যখন ওদিকে কমতে শুরু করবে, তখন আমাদের এদিকে হয়ত বাড়বে।
দেশে মার্চেই বেশি সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে : দেশে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেয়া প্রতিদিনকার সংখ্যা যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে পাঁচশ বা এর উপরে। কিন্তু তার আগের সপ্তাহে টানা কয়েকদিন সংক্রমণ ছিল তিনশ’র ঘরে। ২ জানুয়ারি ২০২২ তারিখ সেই সংখ্যা সাড়ে পাঁচশ’র উপরে ।
এবার দেখা যাক আরেকটি বিষয়, তা হল, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে পরপর দুই বছর একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। আর তা হল, দেশে শীতের মৌসুমে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে গিয়ে মার্চ থেকে সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। এবার ও তেমন হওয়ার সম্ভাবনাই দেখছেন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সরকারের কারিগরি কমিটির একজন সদস্য ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, মার্চের দিক থেকে যখন দেশীয় ভাইরাসগুলো কমে আসবে; তখন করোনাভাইরাস আবার সুযোগ নেবে। সেটাই গত দুই বছর ধরে হয়ে আসছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা খোলা চোখে যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটি হল যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন মার্চের দিকে নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন মার্চের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে ব্যপকভাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে নতুন হিসেব-নিকেশ হল ভারতে করোনা পরিস্থিতি দ্রুত ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। এছাড়া আমাদের পাশের ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ৩ জানুয়ারি, সোমবার থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীর শিখন-শেখানো কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
এছাড়া দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবারও বন্ধ হবে বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন এবং ধানমণ্ডিতে জয়িতা টাওয়ারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে আবার নতুন আরেকটি ভাইরাসের ঢেউ আসছে। যদি এটি বিস্তার লাভ করে, তা হলে যে কোনো সময় আবার কিন্তু সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।
সার্বিক বিবেচনায় বলা যায়, যেভাবে দেশে-দেশে নতুন এই ধরন দ্রুত ছড়াচ্ছে সে হিসাবে জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে অপ্রত্যাশিত এই ভাইরাসের নতুন ধরন এদেশেও বিস্তার করার সমুহ সম্ভাবনা আছে। আর তখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমুহ বন্ধ করা ছাড়া আর কোন বিকল্প সম্ভবত থাকবে না সরকারের! আর বিশেষজ্ঞদের কথায় মার্চের দিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির শংকা অমুলক নয়।
-ডিবি আর আর।