প্রধানমন্ত্রী ও আদালতের নির্দেশ অমান্য : শিক্ষকদের পক্ষেই রায়

প্রাথমিক

দৈনিক বিদ্যালয় :: প্রাথমিক শিক্ষার ভীতকে আরো মজবুত ও যুগোপযোগী করে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষ প্রতিনিয়ত নানা পদক্ষেপ উদ্ভাবন ও তা প্রয়োগের ব্যবস্হা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কতৃপক্ষের গৃহীত এসব পদক্ষেপ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষার মানোন্নয়নে কতটুকু অনুকুল না প্রতিকুল, সে বিষয়ে আজ শিক্ষক, অভিভাবক এবং সচেতন মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এখানে শিশুবান্ধব বিরোধী নানা নিয়ম পালন করতে গিয়ে কোমল প্রাণ শিশুদের মধ্য থেকে হারিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ, তাদের মাঝে তৈরী হচ্ছে নানা ধরনের হতাশা। অভিভাবকরা হচ্ছেন কিন্ডারগার্টেন সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মুখী। ফলে শিশুরা বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা থেকে, ব্যহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার মুল লক্ষ্য ও অর্জন।

অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি উর্ধতনদের আদেশ, নিষেধ ও নির্দেশনার প্রজ্ঞাপনের ঝুড়িতে একটু উঁকি মারলে যা কিছু দৃষ্টিগোচর হয়, তার প্রায় সবগুলোই- ‘সুুশিক্ষার অনুকূল পরিবেশ, শিক্ষকদের নায্য অধিকার প্রাপ্তি, মানবিক অধিকার, সুস্হ জীবন যাপন,মানিবকতা, মনুষ্যত্ব সহ যে কোন ইতিবাচক দিকের বিপরীতে চলে যায়।

শিক্ষকদের জন্য বিরাজিত ও প্রয়োগকৃত নিয়মগুলো দেখলে স্পষ্টত অনুধাবন করা যায় যে, আরোপিত নিয়মগুলো যেন শিক্ষকদের শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্যই তৈরী। যা গোটা শিক্ষা ব্যবস্হায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিক্ষকরা নিজেদের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে, অযৌক্তিক ও অমানবিক নিয়মের যাতাকলে দিনের পর দিন নিষ্পেষিত হয়ে হারিয়ে ফেলছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাঠদানের উদ্দীপনা। যেখানে শিক্ষকদের নিজস্ব চিন্তা চেতনা, মেধা, উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগের ব্যাপক সুযোগ ও ক্ষেত্র থাকার কথা, সেখানে পদে পদে কতৃপক্ষ কতৃক এমন এমন বিধান পালনে বাধ্য করা হয়,যাতে মানুষ মাত্রে তো বটেই বরং কোমল প্রাণ শিশুরাও যেন  অসংগতি খুজে পায়। যেমনঃ

(১) ডিপিএড প্রশিক্ষণঃ প্রশিক্ষণ মানেই উন্নয়ন।তাই প্রতিটি প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকটি চাকুরীর ক্ষেত্রে দক্ষতার উন্নয়নের সাথে, সাথে বেতন গ্রেডেরও একটা উন্নয়ন হয়। অথচ প্রাথমিকে একজন শিক্ষক দীর্ঘ ১ বছর ৬ মাস মেয়াদি ডিপিএড  প্রশিক্ষণের পর তার বেতন কমে যায়। যার অর্থ দাঁড়ায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তাঁর যে বেতন দাড়ায়, তার চেয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের আগে তার বেতন বেশী ছিল এবং বেশি বলে খ্যাত গৃহীত বেতন আবার ফেরত দিতে হয়। তাহলে কার স্বার্থে, কিসের স্বার্থে শিক্ষকদের অদক্ষ করার জন্য, তাদের বেতন কমানোর জন্য, গৃহীত বেতন ফেরতের জন্য এই দেড় বছর শিক্ষকদের পিটিআই এ পাঠানো হয়? শিশুদের ঐ শিক্ষকের পাঠদান থেকে বঞ্চিত করা হয়?

READ MORE  ওয়াহিদা খানমের উপর হামলার প্রতিবাদ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের

(২) বেতন গ্রেডঃ একই যোগ্যতায় যেখানে অন্য জবে ১০ম গ্রেড পায়, সেখানে প্রাথমিকে দেওয়া হয় ১৫। অনেক কাঠখড়ি পুড়ে অবশেষে  যখন দেওয়া হলো ১৩, সেখানে আবার কৌশলে কেড়ে নেওয়া হলো উচ্চতরগ্রেড সহ অনেক কিছু।

(৩) বিদ্যালয় সময় সূচীঃ উচ্চবিদ্যালয়ের বড়,বড় শিক্ষার্থীরা যেখানে সকাল ১০ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করে, সেখান কোমলমতি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ৯ টা থেকে ৪ টা পর্যন্ত রাখা কতটুকু যৌক্তিক শারিরীক, মানসিক কিংবা মনোবৈজ্ঞানিক ভাবে?

(৪) বদলীঃ আজ ২ বছর বদলী বন্ধ। উদ্দেশ্য অনলাইনে বদলীর ব্যবস্হা করে বদলীতে তদবীর ও ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করা। কিন্তু ফলাফল কি দাঁড়ালো? হয়তো সাধ আছে সাধ্য নেই। কিংবা এসি রুমে বসে স্যার ভেবেই বসে আছেন যে, প্রাথমিকের…. শিক্ষক….। এলাকার প্রতি একটা ডিভোশন আছে। হেঁটে না হয় সাইকেলে চড়ে বিদ্যালয়ে যাবে। বদলীর আর কি দরকার? কিন্ত বাস্তবে বদলী বন্ধ থাকা আর পেশাব জোড় করে আটকিয়ে রাখা একই পরিমাণ কষ্টের। কিন্তু কে বুঝে কার ব্যাথা?

টিকা না নিয়ে স্কুলে যেতে নিষেধাজ্ঞা

চোখ রাঙাচ্ছে ওমিক্রন : সোমবার থেকে বন্ধ স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়

সারা বছর যেভাবে ক্লাস নিতে হবে প্রাথমিক শিক্ষকদের : নেপের নির্দেশনা

(২) সদ্য টাটকা বিড়ম্বনাঃ ডিসেম্বর-২১ সাল। মুল্যায়ন শেষ। ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বিদায়ও নিয়েছে। কেউ কেউ ৬ষ্ঠতে ভর্তিও হয়েছে কিংবা ক্যালেন্ডারের পাতায় বহু প্রতীক্ষার দৃষ্টি বুলিয়ে, বুলিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল প্রত্যাশিত ছুটিতে মনের মাধুরী মেশায়ে  মামা বাড়ি বা পরম আত্মীয়ের বাড়িতে কিছু সময় কাটানোর। অবশেষে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস করে দক্ষতা পান করানো হলো সে ছুটি বাতিল করে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ও হাইকোর্ট কতৃক ঘোষিত প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার জন্য যে কতৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের স্মরণাপন্ন হয়,সে কতৃপক্ষ কতটা মাতা সুলভ না বিমাতা সুলভ আচরণ করে শিক্ষকদের পক্ষে তা যাচাইয়ের ভার পাঠকদের ও দেশের সচেতন অভিভাবকদের ওপর ই রইলো। তবে প্রাথমিক শিক্ষা কে যুগোপযোগী করতে হলে অবশ্য ই বৈষম্যমূলক এসব বিধি বিধানের অবসান ঘটাতে হবে।

READ MORE  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে নতুন সুখবর

-এম ওয়াদুদ ফাররোখ, (ডবল এমএ,সি-ইন-এড,বিএড), সহকারী শিক্ষক, জিয়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট ও সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, ক্ষেতলাল উপজেলা শাখা, জয়পুরহাট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *