সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও মহার্ঘ ভাতার সুপারিশ

বিদ্যালয় প্রতিবেদন : ২০১৫ সালে সর্বশেষ পে-স্কেল ঘোষণার পর অতিক্রান্ত হয়েছে ছয় বছর। দেশের মুদ্রাস্ফীতি এবং দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নবম পে-স্কেল ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদ এবং ১১ থেকে ২০ গ্রেডে চাকরিরত সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা সভা, সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। সরকার এসকল দাবীগুলোর যোক্তিকতা পর্যালোচনা এবং সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ এর উপসচিব ‘জুবাইদা মান্নান’ স্বাক্ষরিত এক গোপনীয় প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়।

এবিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত গোপনীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত ২০১৫ সালের অষ্টম পে-স্কেলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রায় শতভাগ বৃদ্ধি করা হয়। তবে সেই পেস্কেলে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়। এ কারণে কর্মচারীদের মধ্যে বিশেষত ১১ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারীদের মধ্যে স্কেল বাস্তবায়নের শুরু থেকেই অসন্তোষ পরিলক্ষিত হয়।

তাদের সংগঠন ১১ থেকে ২০ গ্রেডের সরকারি চাকরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম, বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদ বিভিন্ন সময় টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ বেতনের গ্রেড সংখ্যা হ্রাসের দাবিতে আলােচনা সভা, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে।

এছাড়া সর্বশেষ অষ্টম বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী স্থায়ী বেতন কমিশন এবং পূর্বের পে-স্কেল ঘোষণার থেকে ছয় বছর অতিবাহিত হলেও নতুন বেতন কমিশন গঠিত না হওয়ায় সরকারি কর্মচারীদের কয়েকটি সংগঠন নবম বেতন কমিশন গঠনসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে ঘোষিত অষ্টম ও সর্বশেষ পে-স্কেলের পর প্রায় ছয় বছর অতিবাহিত হয়েছে। ইতমধ্যে মূল্যস্ফীতি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য। গত ছয় বছরে বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসা, তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের সরকারি কর্মচারী বিশেষত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়ছে। এরফলে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন নতুন পে-স্কেলের দাবিতে নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করে চলেছে।

READ MORE  ১৩তম গ্রেডে বেতন দিতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের জন্য যে আদেশ জারি হল

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের পাঁচ দফা দাবির বিষয়টি বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাধীন আছে।

উক্ত সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা গেছে, তাদের দাবির বিষয়ে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া না গেলে তারা নতুন আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করতে পারেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ তার পূর্ব ঘোষিত বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচি শেষে যে কোন সময় ঢাকার মহাসমাবেশসহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে বলে জানা গেছে। 

এবং উপরোক্ত উভয় সংগঠনের দাবি প্রায় অভিন্ন হওয়ায় তারা ঐক্যবদ্ধভাবেও আন্দোলন করতে পারে বলে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া বর্তমানে উল্লিখিত আন্দোলনের সাথে বাংলাদেশ সচিবালয়ের সরকারি কর্মচারীদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলে ও নতুন পে-স্কেলের দাবিটি সরকারি কর্মচারীদের নিকট জনপ্রিয় হওয়ায় তারাও বৃহত্তর আন্দোলনে যোগ দিতে পারে এবং সারাদেশের সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ও আছে। 

উপরোক্ত দাবিগুলোর বিবেচনায় ৬ দফা সুপারিশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

যে সুপারিশ সমুহ হলো- এরপর থেকে নতুন পে-স্কেল প্রণয়নকালে সরকারি কর্মচারীদের এক ধাপে প্রায় দ্বিগুণ বেতন বৃদ্ধি না করে কয়েক ধাপে পর্যায়ক্রমে বেতন বৃদ্ধি করা যেতে পারে এবং সরকারি কর্মচারীদের দাবিসমূহের যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করা যেতে পারে ।

মুদ্রাস্ফীতির কথা বিবেচনা করে অর্ন্তবর্তীকালীন মহার্ঘ ভাতা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে এবং সরকারি কর্মচারীদের চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘিত হয় তাদের এমন যে কোন তৎপরতার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
এছাড়া আরও কিছু প্রস্তাবনা করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়।

-ডিবি আর আর।

Leave a Comment