সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো : বেতন বৈষম্য নিরসন

বেতন প্রতিবেদন :: দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোয় বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সাথে সরকার চাইছে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন একটি বেতন স্কেল বা কাঠামো প্রদান করতে।

আরও পড়ুনঃ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব

অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষক বদলি শুরু এবার

শিক্ষক বদলীর আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে

এবিষয়ে জানা গেছে, নতুন সেই বেতন কাঠামোয় কোনোরকম বৈষম্য যাতে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়।

এরই মধ্যে অর্থ বিভাগকে এমন একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে সরকার বেতন বৈষম্য নিরসনে ২০১৯ সালের ১লা এপ্রিল তারিখে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। যে কমিটি গত দুই বছরে দৃশ্যমান তেমন কোনো কাজ করেনি। যারফলে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্যও দূর করা সম্ভব হয়নি। এখন সরকারের ৫ বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। সেজন্য দ্রব্যমীল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় আমলে নিয়ে আগামী নির্বাচনের আগে সরকার নতুন একটি বেতন কাঠামো দিতে আগ্রহী। 

এবিষয়ে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের সময়সীমা শেষ হতে আর দুই বছরের মতো বাকি আছে। সে হিসেবে আগামী বছরের শেষ দিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এজন্য নির্বাচনের আগে আবারও সব পক্ষকে অনুকূলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

গত ১৩ বছরে টেকসই উন্নয়নে কতটা এগিয়েছে দেশ এ নিয়ে সরকারের মধ্যে তৃপ্ততা থাকলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অন্যদিকে টানা দুই বছরের করোনা মহামারিতে চাকরি হারিয়েছে বহু মানুষ। এজন্য  আয় কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের।

অন্যদিকে বাকি ৩০ ভাগের মধ্যে থাকা অন্তত ১০ ভাগের আয় বেড়েছে বহুগুণ। এতে দেশের মানুষর আয় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির নানুষের জীবন-জীবিকা চরম সংকটের মুখে। এরই মধ্যে সরকারি চাকুরেদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। 

READ MORE  ১৩তম গ্রেডের বেতন ও বোনাসের বকেয়া পাবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা

চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কাজ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন একজন অতিরিক্ত সচিব এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যে পরিমাণ বেতন বাড়ানো হয়েছে তা আর কোনো সরকারের সময় হয়নি। এটা ঠিক, গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। একই সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। তবে সরকার মনে করে মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয়ই রয়েছে, যদিও জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। আর আয় বেড়েছে দেশের খুব কমসংখ্যক মানুষের। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের আয় সীমিত ও নির্ধারিত। এজন্য নতুন বেতন কাঠামো দরকার। হ্যা, তবে তা হবে কি না এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি বলে জানায়। আমরা আশা করব সরকার নির্বাচনের আগে একটা নতুন বেতন কাঠামো দেবে। 

সূত্র জানান, মূল্যস্ফীতির চাপ, জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকুরেদের নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে চিন্তা শুরু করেছে সরকার। 

সর্বশেষ ২০১৫ সালে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল যা এখন কার্যকর রয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন জাতীয় নির্বাচনের আগেই নতুন বেতন কাঠামো দিয়ে সরকারি চাকুরেদের তুষ্ট রাখতে চায় সরকার। যা আওয়ামী লীগের জন্য ভোটসহায়ক উদ্দীপনা হয়ে উঠতে পারে। এমনটাই বলেন উক্ত উপরোক্ত অতিরিক্ত সচিব।

এবিষয়ে আরো জানা গেছে, এর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য তিনটি ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘নবম বেতন কমিশন’ গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। যার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ অক্টোবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়া ২৭ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিনটি ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘নবম বেতন কমিশন’ গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন জমা দেয় বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। তাদের দাবি হল, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার তাদের জীবনযাত্রার মান, আয়-ব্যয়ের সংগতি, মুদ্রাস্ফীতিসহ অন্যান্য দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় বেতন কমিশন কার্যকরের এক বা দুই বছর আগে বিভিন্ন সময় মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করা হয়েছে।

READ MORE  পদোন্নতি বঞ্চিত শিক্ষক-কর্মচারীরা চাকুরী ১০বছর হলেই উচ্চতর গ্রেড : জেনে নিন বিস্তারিত

উল্লেখ্য, দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বেতন বৈষম্য বিদ্যমান। আর এই বেতন বৈষম্য বিগত ২০১৫ এর পে-স্কেলে আরও বেশি প্রকট হয়। বিশেষ করে ১০-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রবল।

ডিবি আর আর।

Leave a Comment