আমার লেখাটা পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো চোরের জন্য

বিশ্ববিদ্যালয়

এমন একটি শিরোনামে নিশ্চয় চোখ আটকে গেছে সবার!

‘সাড়ে তিন বছর ধরে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ভূয়া ছাত্র আটক’

বিস্তারিত এমন ছিলঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ২০১৮–১৯ সেশনে দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস,পরীক্ষায় অংশগ্রহন করা এক ভুয়া ছাত্রকে আটক করা হয়েছে। শিক্ষার্থী না হয়েও বিভাগের ১৩তম ব্যাচের ক্লাস-পরীক্ষা; এমনকি আচার-অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করেছেন বৈধ শিক্ষার্থীর মতোই। আজ বুধবার ষষ্ঠ সেমিস্টারের একটি কোর্সের পরীক্ষা চলাকালে ধরা পড়েন তিনি।

আমার লেখা পৃথিবীর সব চেয়ে ভালো চোরের জন্য! চোর আবার ভালো? হা. হা.. তবে শুনুন…

‘সঞ্চয়িতা’ যেটা রবি ঠাকুরের লেখা। যারা বাংলা বানানরীতি সম্পর্কে জানেন তারা বলবেন ; এই বানানে ভুল আছে। অথচ রবি ঠাকুরের বানান ভুল! তাও আবার একটা বইয়ের নাম লেখার ক্ষেত্রে। এঠা হতে পারে না!

হ্যা, রবি ঠাকুর ও স্বীকার করে গেছেন, বানানটি ভুল। এর পিছনের একটা গল্প আছে। এটা ছিল সেই সময়ের একটা প্রিন্টিং মিসটেক। তখন প্রতিটি বর্ণ আলাদা আলাদা করে ছাঁচে বসিয়ে তারপর একটা পেইজের প্রিন্ট বের করতে হত। এবং একেক পেইজ ছাঁচে রেডি হওয়ার সাথে সাথে কয়েক হাজার সেই পেইজ প্রিন্ট বের করা হত।

চলছিল সঞ্চয়িতার প্রিন্ট। ২১ পাতা ‘সঞ্চয়ীতা’ না লিখে, সঞ্চয়িতা’ ই-কার দিয়ে লেখা হয়ে গেল। সবশেষে নজরে আসল প্রিন্টিং প্রেসের মালিকের। প্রেস মালিকের চক্ষু চড়কগাছ! বিশ্ব কবির বইয়ের নামের বানান ভুল! আবার ধুতে হবে আমাকেই! ( সঞ্চয়িতা বা যে কোন বইয়ের উপরে আগে প্রতিটি পাতায়, সেই বইয়ের নাম লেখা থাকত)

প্রেস মালিক আসু বিপদ ও ক্ষতির কথা চিন্তা করে, ভেবে আকুল! সঞ্চয়িতা ২১ পাতা ই-কার বা ভুল বানানে লেখা হয়ে গেছে। যে একুশ পাতার হাজার হাজার কপি ইতিমধ্যে ভুল বানানে প্রিন্ট ও বের হয়েছে। এখনকার হিসাবে কয়েক কোটি টাকা লস গুনতে হবে। ভয়ে ভয়ে সব শেষ রবি ঠাকুরের বারান্দায় প্রেস মালিকের আগমন। ঘটনা খুলে বললেন তিনি। ‘আপনি বললে, আবার নতুন প্রিন্ট কপি বের করব আমি।’ বিশ্ব কবি মৃদু হেসে, একটু ভেবেই (প্রিন্ট মালিকের ক্ষতির কথা চিন্তা করে) যা বললেন তা এক বিস্ময়কর উক্তি। যার একুশ পাতা ২১ পাতা
ভুল করে ই-কার দিয়ে লেখা হয়ে গেছে। সেই ই-কার ই সঠিক। সেখান থেকে বিশ্ব কবির লেখা “সঞ্চয়িতা” এখনো ভুল বানানেই চলছে। কই কারোর কোন ক্ষতি হচ্ছে না তো! বরং দারুণ এক ইতিহাস ও বেঁচে আছে, এই ভুলের সাথে।

READ MORE  বাংলাদেশিদের স্কলারশিপের সুযোগ অস্ট্রেলিয়ায়

এখানে আমি অধমের আরজি হল, ভালোর জন্য চুরি করেছে ওই শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার জন্য চুরি। এক জীবনে হয়ত তার প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে পড়া হত না! তার ভুল করা ২১ পাতা মার্জনা করে, সেই ভুল করে লেখা ই-কার কে মেনে নিলে সহনশীল বাঙালির কী খুব বেশি ক্ষতি হবে? তাকে ঢাবি থেকে পাশ করার সুযোগ দিলে খুব বেশি খারাপ হয়ত হবে না! সে তো পাশ করেছে সেমিস্টারগুলোতে । সে ঢাবিতে পড়ার ও যোগ্যতা রাখে বলা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখানে একটি দৃষ্টান্ত কী স্থাপন করতে পারবে! জাতি হিসাবে আমরা এবার পারব হয়ত একটু উদারতা দেখাতে। এটি শেখার জন্য চুরি। এটি হয়ত একটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো চুরির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে!

[আমার মতামতটি একান্ত ব্যক্তিগত। ত্রুটি মার্জনীয়। আপনার মতামতটি জানাতে ভুলবেন না]

-মোঃ রোকনুজ্জামান, একজন শিক্ষক, ২৬ নং যতীন্দ্রনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *