বেসরকারি কলেজে চলমান অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করে কারিগরি কোর্স চালু হচ্ছে দ্রুত

ডিবি ডেস্ক :: বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করতে ২০১৯ সাল থেকে নতুন কলেজে এসব কোর্সের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না৷ চলতি বছর থেকে নতুন ভর্তিও বন্ধ হতে পারে৷

এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ যে কমিটি ৪মে, মঙ্গলবার প্রথম বৈঠক করেছে৷ যে কমিটিতে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মন্ত্রণালয় ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়া এই কমিটির সদস্য্রা হল, অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু আছে এরকম দুটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ।

অধ্যাপক মশিউর রাহমান বলেন, ‘‘আমরা উচ্চ শিক্ষার মান বজায় রাখতে আশা করি একটি সঠিক পথ বের করতে পারবো৷’’

তাদের সেই বৈঠক শেষে সেদিন বিকেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, আমরা একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণের কাজ শুরু করেছি মাত্র৷ এখনো নিশ্চিত নয় যে, বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করা হবে কিনা৷

এখানে উল্লেখ্য, বেসরকারি বিভিন্ন কলেজ সমুহে ১৯৯৩ সাল থেকে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের অনুমোদন দেয়া হয়৷ এখন দেশে মোট ৩১৫টি বেসরকারি কলেজে এই কোর্স চালু আছে৷ ২০০ কলেজ সরকারি হয়ে যাওয়ায় তারা আর এর আওতায় পড়ছে না৷ কোর্সগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় এবং এই পর্যায়ে পাঠদানের জন্য সাড়ে ৪৫০০ এর মত শিক্ষক আছেন৷ যার মধ্য থেকে কেউই এমপিওভুক্ত নন৷ তারা কলেজগুলো থেকে যে বেতন পান সেটাই সবকিছু। তাদের জন্য সরকারি কোনো বেতন নেই৷ যারফলে, করোনার পরিস্থিতির কারণে তাদের অনেকেই কোন বেতন পাচ্ছেন না৷ অথচ কলেজ সমুহে অনার্স কোর্স অনুমোদনের সময় শর্ত ছিল অনার্স কোর্স শিক্ষকদের কলেজ থেকেই মূল বেতন দিতে হবে৷

এছাড়া আরও উল্লেখ্য, দেশের এসকল কলেজ সমুহে অনার্স এবং মাষ্টার্স পর্যায়ে তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী অর্ধ্যনরত আছে৷ এই অনার্স কোর্স বন্ধ হলে তাদের কী হবে তা-ও এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না৷

READ MORE  এ বছর কী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে : যা বলছে মন্ত্রী, সচিব ও মহা-পরিচালক

এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যকে জানিয়েছিলেন, “বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স আর ভবিষ্যতে থাকবে না৷” উনার ভাষায়, আমরা সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাইনা৷ তিনি বলেছিলেন, জেলায় জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে৷ সেখানে যারা উচ্চ শিক্ষা নিতে চাইবেন, তারা নিবেন৷’’

শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, কলেজগুলোতে ডিগ্রি পাসকোর্সের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার নানা ধরনের শর্টকোর্স চালু হবে৷

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরেই বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্সে ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হতে পারে৷ মূলতঃ শিক্ষার মান নিশ্চিত করতেই মূলত যেসব বেরসকারি কলেজে শিক্ষক সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব আছে, সেখান থেকে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷ হ্যা, তবে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের এই শিক্ষকদের নানা ধরনের কারিগরি শিক্ষার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে, যাতে কলেজগুলো তাদের দিয়ে কারিগরি শিক্ষার শর্ট কোর্স চালু করতে পারে৷ কিন্তু সে সকল শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা হবে তা বলা যাচ্ছে না৷

তবে অনার্স-মাস্টার্স কোর্সধারী কতগুলো বেসরকারি মহাবিদ্যালয় বন্ধ করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়৷ এ ব্যাপারে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তাদের সিদ্ধান্তের উপরে বেসরকারি কলেজে কোর্স বন্ধ না-ও হতে পারে৷

এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির প্রধান অধ্যাপক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জানান, তারা একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে চান৷ যাতে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকরা ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, এটি মাথায় রেখেই শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছেন বলে দাবি করেন।

অধ্যাপক মশিউর রহমান আরও বলেন, এসকল প্রতিষ্ঠানের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষকদের বেতন সরকার দেবে বা তাদের এমপিওভুক্ত করা হবে এমন কোনো কথা সরকার দেয়নি৷ বেতন কলেজেরই দেয়ার কথা৷ হ্যা, তবে কলেজ যাতে বেতন দেয়, সেটা নিশ্চিত করতে আমরা চেষ্টা রত৷ এছাড়া যেসকল কলেজের অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করা হবে সেখানকার শিক্ষার্থীরা যাতে অন্য কলেজে কোর্স শেষ করতে পারে তারও উপায় বের করারও চেষ্টা করছি আমরা।

READ MORE  নতুন গণ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগে সুযোগ পাচ্ছেন পঁয়ত্রিশের বেশিরা

উল্লেখ্য, গঠিত এই কমিটি এখন সেই কলেজগুলোর অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষার মান পর্যালোচনা করবে৷ প্রয়োজনে সরেজমিনেও যাবে৷ এক্ষেত্রে, যেসব কলেজের মান ভালো, সেগুলো হয়ত চালু রাখবে।

এবিষয়ে জানাগেছে এই কমিটির লক্ষ হল, এই সকল কলেজে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষা চালু করা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া৷ যেহেতু করোনার চলছে, সেহেতু এই প্রশিক্ষণ অনলাইনেও দেওয়া হতে পারে। এটি করলে হয়ত শিক্ষকদের বাদ দিতে হবে না এবং ছাত্র-ছাত্রীরাও কারিগরি ও আইটি শিক্ষার সুযোগ পাবে৷

-ডিবি আর আর। সূত্র : DW

Leave a Comment