সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি একটি বিশেষ অনুরোধ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক যুগ বা কয়েক দশক আগে নিয়োগ প্রাপ্ত কিছু সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষক আছেন, যারা আর কয়েক বছরের মধ্যেই অবসরে চলে যাবেন। এই সকল এসএসসি পাস সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে কিছু জুনিয়র শিক্ষক তুচ্ছার্থে মন্তব্য করেই চলেছেন, যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারেনা। ভুলে গেলে চলবে না এসএসসি কিংবা অষ্টম শ্রেণি পাস কিংবা আরো কম শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষকের হাতেই অনেকের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি।

তাঁদের হাত ধরেই অনেকের শিক্ষাজীবনের পথচলা শুরু, অনেকের সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই। যারা বেশী শিক্ষিত ভেবে নিজেকে অতিবড় ভাবছেন; তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, নিজেকে অতিবড় ভাবতে যাবেন না। সম্মান দিতে শিখুন, বিনিময়ে সম্মান, ভালোবাসা, দোয়া সবই পাবেন। সিনিয়রদেরকে নিয়ে অসম্মান জনক মন্তব্য করা নিজেরই অজ্ঞতার পরিচয়। অন্যকে ছোট করার চেষ্টা করে নিজে কখনও বড় করা যায়না!

প্রাইমারীতে এখন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকও আছেন, আরো আসছেন। সম্প্রতি কুলাউড়ার দু’জন প্রধান শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

কোনভাবে ডিগ্রিপাসের চেয়ে ভাল ফলাফল নিয়ে এসএসসি পাস প্রাথমিক শিক্ষক অনেক যোগ্য। ভাল ফলাফলধারী স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোন শিক্ষক এমন কোন মন্তব্য করার মত মন-মানষিকতা কখনো রাখেননা।

১৯৬৭-১৯৬৮ সনে আমার প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন এমবি, জিটি বা মধ্যবাংলা গুরু ট্রেনিং ডিগ্রিধারী। এমই স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাসকে বলা হতো মধ্যবাংলা পাস, আর এক মাসের শিক্ষক প্রশিক্ষণকে বলা হত গুরু ট্রেনিং। তাছাড়া আরো একজন শিক্ষক ছিলেন চতুর্থ শ্রেণি পাস। উনাদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার ভিত্তিকে কাজে লাগিয়ে চচট্টগ্রাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিতে আমার কোন সমস্যা হয়নি। সময়ের প্রয়োজনে নন-মেট্রিক শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে ডিগ্রি পাস ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছেনা। আর কয়েক বছর পরেই ডিগ্রি পাসের নিচে কোন শিক্ষকই থাকবেনা। ইতিমধ্যেই কুলাউড়ার দু’জন প্রধান শিক্ষক পিএইচডি ডিগ্রি ও অর্জন করেছেন।

READ MORE  ১০ দফা দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি ঘোষণা

কারো শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা ঠিক নয়। যারা যে যোগ্যতায় নিয়োগ পেয়েছেন, সে যোগ্যতায়ই তাদের প্রমোশন পাওয়ার অধিকার। কাউকে অধিকার বঞ্চিত করা অন্যায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত সকল শিক্ষককে অনুরোধ করব, সিনিয়র শিক্ষকদের প্রতি অসম্মান জনক উক্তি করা থেকে বিরত থাকুন। এটাই প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগসহ সবার জন্য মঙ্গল। সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

-জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতি।

Leave a Comment