এসিআর বা ACR হল একটি গোপনীয় প্রতিবেদন। ইংরেজিতে ACR এর পূর্ণাঙ্গ রুপ হল Annual Confidential Report বা বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন।
এই গোপনীয় প্রতিবেদনটি সরকারী কর্মচারী কর্তৃক প্রতিবেদন প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ কাজের সাধারণ মূল্যায়ন হওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়, যখন পদোন্নতি, নিশ্চিতকরণ ইত্যাদির প্রশ্ন আসে তখন তুলনামূলক যোগ্যতার ডাটা হিসাবে পরিবেশন করার উদ্দেশ্যে এই জাতীয় প্রতিবেদনগুলি সংরক্ষণ করা হয়। সরকারি চাকুরীতে স্থায়ী বা দুই বছর সময়কাল পর থেকে এই প্রতিবেদন প্রদান করা হয়।
বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন বা এসিআর মূলত একজন সরকারি কর্মচারীর কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন সম্পর্কে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদন। এখানে কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন ছাড়াও এতে প্রতিবেদন গ্রহনকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর চরিত্র, আচরণ, সততা, আর্থিক লেনদেন ইত্যাদি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করা হয়। এ সি আর গোপনীয়তা রক্ষা করেই প্রদান করা হয়।
এ সি আর এর ইতিহাসঃ সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দক্ষতা মূল্যায়নের দীর্ঘ ও বৈচিত্র্যময় ইতিহাস ও রয়েছে। যতদুর জানা যায় ১৮৩৪ সন পর্যন্ত চাকুরিতে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হত এবং এই সিনিয়রিটি ধরা হতো চাকুরিতে প্রথমদিন যোগদানের তারিখ থেকেই। কিন্তু এই পদ্ধতি ১৮৩৪ সনেত ২৮ জানুয়ারি তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের এক আদেশ বলে এই পদ্ধতির পরিসমাপ্তি ঘটে। সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল যে, শুধুমাত্র চাকুরিতে সিনিয়রিটির ভিত্তিতেই শূণ্য পদ পূরণ করা হবে না। দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা এর ভিত্তিতে একজন জুনিয়র কর্মকর্তা ও পদোন্নতি পাবেন।
সেখান থেকেই এসিআর পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। সে সময়ে এসিআর কে বলা হত ‘CR’ বা Corrector Roles. হ্যা, তবে এখন যেমন এটি গোপনীয় এটি প্রথম থেকেই এমন গোপনীয় ছিলনা। আস্তে আস্তে এটি গোপনীয় নথিতে পরিনত হয়েছে।
স্বাধীনতার পূর্বকাল সময়ে, পাকিস্তান আমলেও বার্ষিক এই গোপনীয় প্রতিবেদন প্রথা চালু ছিল। ১৯৭৪ সনে এই ফরমটি বাংলায় ছাপা হয়, যা ১৯৮১ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এরপর ১৯৮২ সনে নতুন ধরনের এসিআর ফরম ইংরেজিতে ছাপা হয় এবং এর সাথে বার্ষিক মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা রাখা হয়। এরপর ১৯৮২-৮৫ সাল পর্যন্ত আবার বাংলায় ছাপা হয়।
অতপর, ১৯৮৬ সনে ‘সামগ্রিক মূল্যায়ন’ শিরোনামে নতুন একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত হয় যেটি ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। সর্বশেষ ১৯৯০ সনে এসিআর ফরম পরিবর্তন করা হয় এবং এ পরিবর্তিত ফরমটি এখনো পর্যন্ত চালু রয়েছে।
এসিআর ফরমের গ্রেডিং ইতিহাসঃ এসিআর ফরমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেডিং বা শ্রেণি বিন্যাসে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন আনা হয়েছে। তখন ১৯৮২ সন। এসিআর ফরমের গ্রেডিং-এর মানক্রম ছিল এমন: অসাধারণ ৯১ থেকে ১০০, উত্তম ৮১ থেকে ৯০, উচ্চমান ৬৫ থেকে ৮০, চলতিমান ৪৫ থেকে ৬৪, চলতি মানের নিচে ৩১ থেকে ৪৪ এবং অসন্তোষজনক ২০ থেকে ৩০। এরপর ১৯৯০ সন থেকে চালু এসিআর ফরমে গ্রেডিং এর মানক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। সেই পরিবর্তিত ব্যবস্থায় গ্রেডিং এর মানক্রম হলো এমন: অসাধারণ ৯৫ থেকে ১০০, উত্তম ৮৫ থেকে ৯৪, ভাল ৬১ থেকে ৮৪, চলতিমান ৪১ থেকে ৬০ এবং চলতি মানের নিচে ৪০ ও তার চেয়ে কম।
এ সি আর পদ্ধতি নন গেজেটেড কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য তবে এক্ষেত্রে প্রতিবেদন ফরম গেজেটেড কর্মকর্তাদের থেকে আলাদা। নিম্ন পর্যায়ের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এই প্রতিবেদন দেওয়া হয় না।
এসিআর ফরম কিভাবে পূরন করতে হয়? এসিআর ফরম কখন পূরন করতে হয়? এসিআর ফরমে প্রতিবেদন খারাপ দিলে কী হয়? এসিআর ফরম অবসরে থাকা কর্মকর্তা পূরণ করতে পারবে কিনা? এসিআর কে কাকে প্রদান করে?
মোটকথা, এসিআর সম্পর্কে বিস্তারিত লেখা আসছে পর্যায়ক্রমে। আপনার চাকুরী সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর থাকবে ‘দৈনিক বিদ্যালয়’ এ। দেখতে নিয়মিত ভিসিট করুন, dainikbidyaloy.com লিখে সার্চ দিয়ে। আপনার লেখা প্রকাশের জন্য আমাদেরকে পাঠানোর ইমেইল ঠিকানা হল dainikbidyaloy@gmail.com
আরো পড়ুনঃ সমন্বিত নিয়োগ বিধি ২০২০ পদোন্নতি ও জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণে প্রাসঙ্গিক ভাবনা