শর্ত সাপেক্ষ অস্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ

মাধ্যমিক

বিদ্যালয় প্রতিবেদন : এনটিআরসিএ ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিকভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত ৩৮২৮৩ জন শিক্ষকের পুলিশ/নিরাপত্তা ভেরিফিকেশন চলমান রেখে শর্ত সাপেক্ষ অস্থায়ীভাবে নিয়োগ সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই মর্মে গত ১৮জুলাই  একটি নোটিশ প্রকাশ করে মাউশি। নোটিশে বলা হয়- নিয়োগ সুপারিশ প্রাপ্ত কোনো শিক্ষকের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এজেন্সি কর্তৃক কোনো বিরূপ মন্তব্য/আপত্তি উত্থাপিত হলে অবিলম্বে উক্ত সুপারিশ বাতিল বলে গণ্য হবে এবং সংশ্লিষ্ট পার্থীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একাংশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য গত বছর ১৫ জুলাই ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশ প্রাপ্তদের রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। তবে অন্য দুইটি নিয়োগের মত এবার সরাসরি নিয়োগের সুপারিশ না দিয়ে মন্ত্রণালয় পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে করে চূড়ান্ত জয়েনিং কবে হবে এব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ৬মাস অতিক্রম হবার পর সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষকদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং এনটিআরসিএর কার্য পরিচালনা বিঘ্নতা দেখা দিলে এনটিআরসিএর সুপারিশ ক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে শর্ত সাপেক্ষ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের ব্যাপারে সুপারিশ প্রাপ্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

১০ম গ্রেডের রায়ে শিক্ষকরা যেভাবে লাভবান হবেন : নথি সহ

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় জানালো মন্ত্রণালয়

টিকা না নিয়ে স্কুলে যেতে নিষেধাজ্ঞা

এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সুপারিশ প্রাপ্তদের একটা বড় অংশ ইনডেক্সধারী শিক্ষক, যারা মূলত প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করবেন। তাই তারা মনে করছেন এমন শর্ত সাপেক্ষ নিয়োগ তাদের জন্য হুমকি স্বরূপ। ৩য় চক্রে পুনরায় নিয়োগ সুপারিশ প্রাপ্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইনডেক্সধারী শিক্ষক প্রতিনিধি জানান, শর্তের মাধ্যমে বর্তমান প্রতিষ্ঠান ছেড়ে নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পর যদি কোনো কারণে বিরূপ/আপত্তিকর রিপোর্টের কারণে নিয়োগ বাতিল হয় তাহলে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। কারণ তখন আমাদের পূর্বের প্রতিষ্ঠানে আবার ফিরে যাবারও কোনো সুযোগ থাকবে না, তাই ভেরিফিকেশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর জয়েনিং দিলে আমাদের জন্য সিদ্ধান্ত দেওয়া সহজ হতো।

READ MORE  মাধ্যমিকে আলাদা বিভাগ নিয়ে সংসদে শিক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্য

অপর দিকে নতুন সুপারিশ প্রাপ্তরা সিদ্ধান্তটিকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছেন। নতুন সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ আবুবকর সিদ্দিক বলেন- পর্যায়ক্রমে পুলিশ এবং এনএসআই ভেরিফিকেশন খুব সময় সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। তাই ভেরিফিকেশন চলমান রেখে জয়েনিংয়ের সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সুপারিশ পাওয়ার পরও মাসের পর মাস অপেক্ষা করা আমাদের জন্য হতাশার এবং মানবেতর। এতে একদিকে আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে অন্যদিকে তীব্র শিক্ষক সংকট দূর হবে এবং শিক্ষা কার্যক্রমও ত্বরান্বিত হবে। তবে আমাদের অনেকে একটা বিষয়ে এখনো দুঃচিন্তাগ্রস্ত, তাহলো অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগের ফলে এমপিও (বেতন) পেতে আবার কোনো বাধা আসে কিনা? কারণ বেশিরভাগ শিক্ষকই নিজ জেলা থেকে বহুদূরের প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। এমতাবস্থায় যদি দ্রুত এমপিও না দেওয়া হয় তাহলে নিজ ব্যয়ভার বহন করে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই আমাদের এমপিওভুক্তি যেন যথারীতিতে দ্রুততার সাথে দেওয়া হয়।

শর্ত সাপেক্ষ অস্থায়ী ভিত্তিতে সুপারিশ প্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে এনটিআরসিএ যুগ্মসচিব এবিএম শওকত ইকবাল শাহিন জানান- মন্ত্রণালয় আমাদের এই ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয় কিনা দেখতে হবে। আমরা সুপারিশ পত্রে বিষয়টি স্পষ্ট করবো। তবে নিয়োগ অস্থায়ী থাকাকালীন যে এমপিও দেওয়া হবে না এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

ইনডেক্সধারীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ইনডেক্সধারীদের ক্ষেত্রেও একই শর্ত প্রযোজ্য থাকবে।

প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে নতুন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিলে তারা সম্পূর্ণ নতুন শিক্ষক স্ট্যাটাসেই পরিচিত হবেন৷ তাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা এবং উচ্চতর গ্রেড বা ইনক্রিমেন্ট পুনরায় বিবেচনা করা হবে না। ইনডেক্সধারীগণ শুধু মাত্র আবেদনের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলে অতিরিক্ত সুবিধাটি পেয়ে থাকেন। কিন্তু নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ নতুন শিক্ষক হিসেবে গণ্য হবেন।

তাই বিরূপ ভেরিফিকেশন জনিত কারণে তাদের নিয়োগও বাতিল হতে পারে। এখন এই ব্যাপারে তারা কি সিদ্ধান্ত নিবেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কারণ তারা জেনে-শুনে এই প্রক্রিয়ায় এসেছেন।

READ MORE  নবম শ্রেণিতে অটো প্রমোশন নয় : উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি

কবে চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশ করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কিছু প্রস্তুতির ব্যাপার আছে, আমরা এব্যাপারে আলোচনা করছি। আমরা চাইছি নির্ভুল এবং ঝামেলামুক্ত ভাবে সুপারিশটি হোক। তারিখ চূড়ান্ত না হলেও আমরা খুব দ্রুত সুপারিশ প্রদানের জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, আশাকরা যায় খুব শীঘ্রই হবু শিক্ষকগণ সুপারিশ পাবেন।

অন্যদিকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্তদের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে ধারণাটি স্পষ্ট করতে আজ(১৯জানুয়ারি) মাউশি অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) জনাব ফৌজিয়া জাফরীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি দৈনিক বিদ্যালয় প্রতিনিধিকে জানান, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হলেও এমপিও পেতে কোনো বাধা নেই। যাদের সুপারিশ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে হয়েছে তারা যথারীতিতে এমপিও ভুক্ত হতে পারবেন। তবে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ প্রাপ্তরা নিয়মানুযায়ী এখনই এমপিওভুক্তির আওতায় আসতে পারবেন না।

এসম্পর্কে তিনি আরো বলেন, সকল চাকরির ক্ষেত্রেই প্রথমে অস্থায়ী ভিত্তিতেই নিয়োগ দেওয়া হয়। তারপর নির্দিষ্ট সময় বা শর্তপূরণ সাপেক্ষে তা স্থায়ী হয়। এটাও সেরকম। এতে এমপিওভুক্ত হতে বা বেতন পেতে কোনো বাধা নেই।

শর্তসাপেক্ষে নিয়োগ ইনডেক্স ধারীদের জন্য ঝুঁকির কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু তারা আগে থেকেই সমপদে চাকরিরত, তাই তাদের তো মেজর কোনো প্রোবলেম থাকবার কথা নয়, তাহলে তাদের ভয় কোথায়? তবে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট অনুযায়ী চাকরি স্থায়ীকরণ বা বাতিলের সিদ্ধান্তটি সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবে।

এ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, ৩৮২৮৩ জন প্রাথমিকভাবে সুপারিশ প্রাপ্তদের মধ্যে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ প্রাপ্ত ৩৪৬০৭জন যোগদানের পরই এমপিওভুক্তির আওতায় আসবেন এবং যোগদানের দিন থেকে তাদের বেতন বিবেচনা করা হবে। কিন্তু নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ প্রাপ্ত ৩৬৭৬জন শিক্ষককে অপেক্ষা করতে হবে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তি হওয়ার আগপর্যন্ত।

আ.ব.সি/ডিবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *