মহাপরিচালকের আবেগ, বিবেক না আইনে নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক শিক্ষকদের ভাগ্য?

প্রসঙ্গঃ শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও বদলী

দৈনিক বিদ্যালয় :: যে কোন অধীনস্থরা উপকৃত হয় তাদের উর্ধতনের ২টি বিষয় দ্বারা। একটি হলো- উর্ধতনেরমেধা। আর ২য় টি হলো- উর্ধতনের মহানুভব হৃদয় কিংবা দয়াদ্র বিবেক।

মেধা বা ১মটির দ্বারা অধস্তনদের সমস্যা, প্রয়োজন, প্রাপ্তি সুক্ষ্মভাবে ধরা পরে  সময়ের বাঁকে, বাঁকে।আর তখনই তা সমাধান করতে ও প্রয়োজন মেটাতে তাঁদের সেই তীক্ষ্ণ মেধা উদ্ভাবন করেন সময়োপযোগী নানা পথ।মিটিয়ে দেন অধস্তনদের প্রয়োজন। সৃষ্টি করেন তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য সুন্দর, সাবলীল পরিবেশ।

আরও পড়ুনঃ কওমি মাদরাসা বৃদ্ধি চরমে : ছাত্র ধরে রাখা দায় প্রাথমিকে

আবারও একাদশ শ্রেণির এসাইনমেন্ট প্রকাশ : ডাউনলোড

বিএড কলেজে ভর্তি চলছে : ভর্তি হতে পারেন যে ১৭ টি কলেজে : নাম ঠিকানা সহ

আর মেধা বা ১ম টির  অনুপস্থিতিতে   যদি ২য়টি থাকে তবুও তাতে অধস্তনদের সমস্যা হবার কথা নয়। কারণ উর্ধতনদের মস্তিষ্কে অধস্তনদের সমস্যা ধরা না পরলেও অধস্তনদের আকুল আবেদনের অসহায় আর্তনাদ  তাঁদের বিবেকের দরজায় গিয়ে কড়া নাড়ে। অধস্তনদের প্রয়োজন,চাহিদা ও অভিযোগ গুলো উর্ধতনদের বিবেকে গিয়ে আঘাত করে,করে দংশন।আর বিবেকের তাড়নায় তখন উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে ও যুক্তিযুক্ত দাবী পূরণ করে তৈরি করেন দায়িত্ব কর্তব্য পালনের সঠিক ও সুন্দর পরিবেশ।

প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ বর্তমানে উর্ধতনদের উপরোক্ত কোনটির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে? এ প্রশ্ন আজ সবার মনে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সর্বোচ্চ পদধারী, প্রায় ৪ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষকের অভিভাবক, বর্তমান মহাপরিচালক মহোদয় সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১০ দাবীর প্রেক্ষিতে “মাছরাঙা” টেলিভিশন প্রতিবেদকের প্রশ্নের যে উত্তর দিয়েছেন, তাতে গোটা শিক্ষক সমাজের বুকে  রক্তক্ষরণ হয়েছে, গোটা শিক্ষক সমাজ হয়েছেন আহত।

পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সময়ের লগ্নে সব কিছুই পরিবর্তনশীল। আর এই চিরন্তন নিয়মে চাকরিতে বেতন,স্কেল,প্রমোশন ইত্যাদি ইত্যাদি পরিবর্তন পৃথিবী সৃষ্টি লগ্ন থেকে ছিল,আছে এবং থাকবেই।সেটা পিয়ন থেকে শুরু করে মহাপরিচালক মহোদয় স্যারের জীবনেও ঘটমান।

READ MORE  প্রাথমিকের শিক্ষকরা কী এগারো ও দশম গ্রেড পাওয়ার যোগ্য নয়!

আবার চখের সামনে নার্স, ইউনিয়ন সচিব,কৃষি উপসহকারী, পুলিশের এস আই সহ অনেক পদে অধিষ্ঠিতরা নিয়োগ বিধিতে ১৫/১৪/১৩ গ্রেড দেখে যেগদান করলেও আজ তারা ১০ম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। এই নির্ভেজাল, নিরেট,দিবালোকের মতো অহরহ সত্য ও বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে মহাপরিচালক স্যার বলেছেন-“শিক্ষকরা তো নিয়োগ বিধি দেখেই চাকুরী তে এসেছেন, চাকরি তে ঢুকে ১০ চাইলেন তো পাবে না।” লক্ষ, লক্ষ শিক্ষকের প্রশ্ন, তিনি আবেগ,বিবেক না আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এমন কথা বললেন?আর এ প্রশ্ন সবার মনেই স্বাভাবিকভাবেই জাগাটাও অস্বাভাবিক নয়।

লক্ষ লক্ষ শিক্ষক মহাপরিচালকের প্রতি আশাবাদী যে,-তিনি আবেগ নয়, নায্যতার ভিত্তিতে, আইনের মানদণ্ডের আলোকে সঠিক প্রাপ্য নিশ্চিত করবেন যা প্রতিটি বিবেকের কাছেই পাবে শান্তি আর সৌহার্দ্যের স্বীকৃতি।

আবার অনলাইন বদলীর অজুহাতে শিক্ষক বদলী বন্ধ ২ বছরেরও বেশি সময়।কিন্তু কেন? আপনি সফটওয়্যার রেডি করতে পারছেন না এতো দীর্ঘ সময়।সে ব্যর্থতা আপনাদের। তার দায়ভার,তার দুর্ভোগ শিক্ষকরা কেন বহন করবে? সম্পুর্ন ভ্রান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা চেতনায় বদলী বন্ধ রেখে শিক্ষকদের এই হয়রানি আর কতদিন চলবে?

বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়েই কোন একটি জিনিস গড়ে উঠে।আমরা শিক্ষকরাও এই শিক্ষাবিভাগের একটি বৃহৎ উপাদান, যদিও পদমর্যাদায় সর্ব নিম্ন।কিন্তু আমরা হলাম বিল্ডিং এর ভীত। এই ভীত দুর্বল হলে বিল্ডিং ধ্বসে পরবে।ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে সব কিছু। তাই ভীত শক্ত করতে ব্যয় বাড়ানো ক্ষতির নয়,বরং দীর্ঘস্থায়ী লাভের।

পরিশেষে সবিনয়ে আবেদন -দিবালোকে চখ বন্ধ করে চারদিকে অন্ধকার, অন্ধকার বলে হাস্যকর পরিবেশ সৃষ্টি নয়,অধস্তনদের নায্য দাবীর প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও সম্মান দিয়ে অন্তত বদলী অতিশীঘ্র চালু করুন,অনলাইন চালুর ব্যর্থতার কলঙ্ক আর ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার না করে আগের নিয়মে বদলী  চালু করুন।লক্ষ লক্ষ শিক্ষকদের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিন।প্রতিটি নায্য দাবী নিয়ে মানসম্মত সমাধান দানে বাধিত করবেন, দয়াকরে।

-এম ওয়াদুদ ফাররোখ, (ডবল এমএ, সি-ইন-এড, বিএড), সহকারী শিক্ষক, জিয়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ক্ষেতলাল, জয়পুরহাট ও সভাপতি, বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, ক্ষেতলাল উপজেলা শাখা, জয়পুরহাট।

Leave a Comment