সৌদিতে প্রবাসী ২ কর্মীর মৃত্যুতে তাদের পরিবার পাচ্ছে ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ

সৌদি আরবে নি;হ;ত দুই বাংলাদেশি কর্মীর পরিবার মোট ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দূতাবাস সৌদি মুদ্রায় ক্ষতিপূরণের ওই পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে নি;হ;ত দুই শ্রমিকের পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রেরণ করেছে।

কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন দাম্মাম শহরে এক অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নি;হ;ত হন। দীর্ঘসময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালের আগস্টে দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারেন সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারী হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন।

সৌদি পুলিশ জানায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করা হবে। দূতাবাস এ বিষয়ে নি;হ;ত সাগরের পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে যোগাযোগ করে। তাঁর পরিবার বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুকূলে আমমোক্তারনামা দেন। এরপর দূতাবাসের প্রতিনিধি দাম্মামের আদালতে অভিযুক্ত উমরের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে অভিযোগ দাখিল করেন। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ এক রায়ে অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন।

অভিযুক্তের বাবা রক্তপণ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপস প্রস্তাব করেন। দূতাবাসের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপস প্রস্তাবে নি;হ;ত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন। আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়।

অন্যদিকে খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী মোসাম্মৎ আবিরণ বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদে নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানি কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানি, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাঁদের পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করেন।

READ MORE  Over Half Screened At Washington Event Show Positive Markers For Myocarditis!

দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের (কেসাস–জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড প্রদান করে মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে আপিল আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। নি;হ;তের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদের ক্ষমার সম্মতি লিখিতভাবে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানান। দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনায় নি;হ;তের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা নিতে সম্মত হয়।

অভিযুক্তের পরিবার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে দূতাবাসের শ্রম শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আবদুল্লাহ আল-তাওয়িলর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ে তাঁর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এরপর আদালত ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ প্রধান আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে আপস অনুযায়ী নি;হ;ত আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশদের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন। সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে দূতাবাসের মধ্যস্থতার ফলে সৌদি নাগরিকের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় দেশটির সরকার দুই নি;হ;ত কর্মীর পরিবারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।